এহসানুল হক, বসিরহাট: বসিরহাট মহকুমার আর্থ সামাজিক অবস্থা অনেকটাই নির্ভর ইট বা ভাটা শিল্পের উপর। আর সেই ভাটা শিল্প লকডাউনের কবলে পড়ার পর থেকে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে শ্রমিকরা।
ইট ভাটার অনুসারী শিল্পেও এক চরম দুর্দিন নামিয়ে এনেছে অপরিকল্পিত লকডাউন। হাজার হাজার শ্রমজীবি ঘোর অন্ধকারে অতিবাহিত করছে তাদের জীবনজীবিকা। ইটভাটা শ্রমিক, মালিক, অনুসারী শিল্পে যুক্ত সবারই এক কথা।
বসন্ত এসে গিয়েছে। হালকা কুয়াশায় ঘেরা এদিনের সকাল।ইছামতী নদীর পাড় বরাবর অসংখ্য ইটভাটা বসিরহাট ইটিন্ডা রোড বরাবর। ইট তৈরির কাজে ব্যস্ত পুরুষ মহিলা শ্রমিকরা। কেমন আছেন তারা? উত্তর একটাই, ভালো নেই দাদা। বললেন রফিকুল গাজি, মিজানুর গাজি,তাপস সরদার,আফরুজা বিবি,মাজিদা বিবিরা।
গত বছর ২২শে মার্চ জনতা কার্ফুর পরের দিন লকডাউন ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই ইটভাটা গুলি বন্ধ হয়ে যায়।১২ এপ্রিল ২০২০ সি আই টি ইউ'র পক্ষ থেকে বি ডি ও'র নিকট ই-মেল করে দাবি করা হয় কাজ হারানো শ্রমিকদের পরিবার প্রতি ৫০০০ টাকা দিতে হবে।ভিন রাজ্যের থেকে আগত যে শ্রমিকরা ইটভাটার মধ্যে শেডে আছে তাদের খাদ্যের ও অন্যান্য খরচ সরকারকে বহন করতে হবে। হোয়াটস অ্যাপ মারফত বাদুড়িয়া ও সি কেও দেওয়া হয়। কিন্তু মৌখিক ভাবে জানান যে ইটভাটা মালিকরা শ্রমিকদের খাদ্যের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু মালিকেরা কোন সাহায্য কার্যতঃ করে নি।বসিরহাট বদরতলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আলামিন মোল্লার কথাও তাই।রামচন্দ্রপুরের ইটভাটার পাতাই শ্রমিক মিজানুর ইসলাম বলেন, সরকার থেকে তো কোন সাহায্য পাইনি। মালিকও কোন সাহায্য করেনি। রামচন্দ্রপুর এলাকার ইট ভাটার মালিকরা কোন ত্রাণ বাবদ সাহায্য করেনি।
বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, বসিরহাট, হাসনাবাদ,মিনাখা ইছামতি বিদ্যাধরী নদীর দুই তীর বরাবর মহকুমা জুড়ে ৮৫০ ইটভাটা।ভাটা প্রতি কমবেশি ২৩০শ্রমিক কাজ করে।এছাড়া ইট সাপ্লায়ার,জ্বালানি সরবরাকারী,ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি যুক্ত অনুসারী অন্যান্য শিল্প। ভিন রাজ্য থেকে মূলত ফায়ার ম্যান ও প্রতি ভাটায় অল্পসংখ্যক ভিন রাজ্য থেকে অবাঙালী হিন্দিভাষী শ্রমিক আসে। বেশিরভাগ স্থানীয়। যার ৮০শতাংশ মুসলিম। মূলত ঠিকাদারদের অধীনে কাজ করে শ্রমিকরা। বর্তমান সময়ে শ্রমিক সংখ্যা কমছে। কারন এখন উন্নত প্রযুক্তি,জেসিপি দিয়ে মাটি কাটা ও পকমিলের ইট তৈরির মাটি তৈরী জেসিপি ও মেসিন দিয়ে করা হচ্ছে। শ্রমিকরা ইটভাটা গুলিতে কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে। কারন সপ্তাহে তিন-চার দিনের বেশি কাজ পকমিল ও হাজিরা শ্রমিকরা পায় না।ছয় মাসে এখন একশো দিনের বেশি কাজ পায় না।যার ফলে এখন অনেকেই ইটভাটার কাজে আগ্রহ হারিয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। সপ্তাহে সব দিন কাজ না পাওয়ায় দৈনিক গড় মজুরি কম। বর্তমান সরকারের আমলে নূন্যতম মজুরি পায় না। বর্ষাকালে যখন কাজ থাকে না, তখন শ্রমিকরা দাদন নিতে বাধ্য হয়।এর ফলে মজুরি আন্দোলন হয় না। শ্রমিকদের উপর চলে ভয়ভীতি ও মালিকের দমন নিপীড়ন শাসকদলের সহায়তায় এমনি অভিযোগ তাদের। কর্মচারীদের বেতনও কম।ই পি এফের টাকা জমা দেয় না। রামচন্দ্রপুর এলাকায় কর্মচারীদের বেতন আট হাজার টাকা।এর কমেও অনেকেই কাজ করে। বসিরহাট এলাকার ভাটা ম্যানেজার ও ভাটার কর্মচারী ই পি এফের টাকা জমা না দেওয়ায় পেনশন ও ই পি এফের টাকা পায় নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct