দিলীপ মজুমদার: করোনার ভয় কেটে গেছে। গা-সওয়া হয়ে গেছে করোনা। গাড়ি-ঘোড়া চলছে। রাস্তায় বেরোচ্ছে মানুষ। অনেকেই মাস্ককে থোড়াই কেয়ার করছে। অনেকদিন বাদে আমরা চারবন্ধু আমাদের পুরানো পড়ার মনোরঞ্জনবাবুর চায়ের দোকানে আড্ডা মারছিলাম। বাঙালির চিরকেলে স্বভাব, কথায় কথায় উঠল রাজনীতির প্রসঙ্গ। এবার বিধানসভায় কে জিতবে তা নিয়ে তর্ক শুরু হতে হঠাৎ শ্যামল বলল, ‘ একটা জিনিস খেয়াল করেছিস! প্রধানমন্ত্রী দাড়ি রেখেছেন।’
সত্যি ব্যাপারটা ভাবার মতো। শ্যামল আবার বলল, ‘ একটু একটু করে দাড়িটা বুক ছুঁতে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছিস।’
এটাও তো ঠিক বলেছে শ্যামল। ফ্রেঞ্চকাট নয়, খোদা কা নূর নয়, সাধু-সন্ন্যেসীর মতো লম্বা দাড়ি। দাড়ির আমি দাড়ির তুমি দাড়ি দিয়ে যায় চেনা। এমনভাবে প্রসঙ্গের অবতারণা করল শ্যামল, যাতে বোঝা যায়, এ বিষয়ে সে রীতিমতো গবেষণা করেছে। এবার শ্যামল প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল বাকি তিনজনের দিকে, ‘যে প্রধানমন্ত্রী ক্লিনফেস ছিলেন, তিনি হঠাৎ দাড়ি রাখতে গেলেন কেন, অনুমান কর তো !’
সলিল বলল, ‘প্রধানমন্ত্রী স্টাইলিস্ট মানুষ। পোশাকে-আশাকে, চলা-ফেরায় সেটা বেশ বোঝা যায়। বিশ্বে যে কজন স্টাইলিস্ট রাজনীতিক আছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। দাড়িটা তাঁর নতুন স্টাইল।’
অমর প্রতিবাদ করে বলল, ‘আমার মনে হয় দাড়িটা স্টাইলের জন্য নয়। তিনি ভারতের প্রাচীন শাস্ত্র, বেদ-বেদান্তের ভক্ত। তাই তিনি প্রাচীন মুনি-ঋষিদের অনুকরণ করছেন। দাড়ি বিজ্ঞ মানুষের ভূষণ। কোন বয়স্ক দাড়িওয়ালা মানুষ গম্ভীরভাবে কথা বললে তা ফেলে দেওয়া যায় না চট করে। আমাদের প্রধানমন্তীর শুভার্থী ডোনাল্ড ট্র্যাম্প দাড়ি রাখলে বাইডেন তারে ধারে-কাছে যেতে পারতেন না।’
শ্যামল এবার আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, ‘ দাড়ি রেখে প্রধানমন্ত্রী মুসলমানদের একটা বার্তা দিতে চান। তিনি যে মুসলমানদের বিরোধী নন, এটাই দেখাতে চান। দাড়ি রেখে একটা অসাম্প্রদায়িক ইমেজ তৈরি করতে চান।’
শ্যামল বলল. ‘তোদের কথায় কিছু কিছু সত্য আছে। কিন্তু মূল সত্যটা তোরা ধরতে পারিস নি এখনও।’
আমরা জানতে চাইলাম মূল সত্যটা।
শ্যামল বলল, ‘ এবছরের শেষে দেখবি প্রধানমন্ত্রীর আর দাড়ি নেই।’
তার কথাশুনে রেগে গেল অমর। বলল, ‘ কী সব ভাট বকছিস ! তুই কী করে জানলি প্রধানমন্ত্রী বছরের শেষে দাড়ি উড়িয়ে দেবেন ?’
শ্যামল বলল, ‘না আমি জানি না। তবে অনুমান করছি। এ বছর আমাদের রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন। এ রাজ্য প্রধানমন্ত্রীর দলের টার্গেট। তাহলে পূর্ব ভারতটা কব্জা হয়ে যায় তাঁদের। বিরোধীরা তাঁদের ‘বহিরাগত’ বলে চিল্লাচ্ছেন। তাঁরাও তাই বাঙালিয়ানা আনার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন বাঙালি মনীষীর কথা বলে ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বাঙালির বড় আইকন রবীন্দ্রনাথ। তিনিও দাড়িওয়ালা ছিলেন। বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা !’
সলিল রেগে গিয়ে বলল, ‘বোগাস অনুমান। প্রধানমন্ত্রী রহস্যময় মানুষ। তাঁর কথা দেবা ন জানন্তি, মানুষ তো ছার।’
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct