আপনজন ডেস্ক: অবশেষে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন থেকে রেহাই পেলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন দণ্ড থেকে অব্যাহতি পেলেন। এই ঘটনাকে ‘ইতিহাসের দুঃখজনক অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া ‘গণতন্ত্র যে ভঙ্গুর’ তা এই ঘটনা আবার মনে করিয়ে দিল বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন।
শনিবার অনুষ্ঠিত অভিশংসনের বিচারে মুক্তি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাঁচ দিনের এই শুনানিতে ট্রাম্পের বিরোধীপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ ছিল, গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গিয়ে ফল বাতিলের উদ্দেশ্যে মার্কিন কংগ্রেসে হামলা চালাতে সমর্থকদের উসকে দিয়েছেন ট্রাম্প। সিনেটের অভিশংসন আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ট্রাম্পকে দণ্ড দেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। তবে তিনি সাংবিধানিক আইনে রেহাই পেয়েছেন।
দণ্ড আরোপের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সিনেট সদস্যের ভোট দরকার। কিন্তু সেই ভোট পড়েনি। ফলে অভিশংসন আদালতের চূড়ান্ত ৫৭-৪৩ ভোটের মাধ্যমে দণ্ড থেকে এ দফাও বেঁচে যান ট্রাম্প।আদালতের সিদ্ধান্ত জানার পর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সামনে অনেক কাজ। আমেরিকার উজ্জ্বল ও সীমাহীন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে দ্রুতই তার আগমন ঘটবে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন।
জানুয়ারিতে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি সিনেটে অভিশংসন আদালতের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে থেকে অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার জন্য সিনেটে আদালত বসেন।
শুরুতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রস্তাব পাঠ করা হয়।
ক্যাপিটল হিলে হামলার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে প্ররোচনা ও উসকানির অভিযোগে সিনেটে ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিশংসনের বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু রিপাবলিকান সিনেটরদের প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় বিচারে ট্রাম্পকে দণ্ডিত করা যায়নি। এমনটা যে ঘটবে, তা বিচার শুরুর আগেই প্রতীয়মান হয়েছিল। রিপাবলিকান বেশির ভাগ সিনেটর ট্রাম্পের বলয়ের বাইরে গিয়ে এই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন না বলে আগেই ধরে নেওয়া হয়েছিল।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য দায়ী করে আনা অভিযোগ অভিশংসনযোগ্য বলে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ট্রাম্পের পক্ষে তার আইনজীবীরা যুক্তিগুলো খণ্ডন করেন।
অভিশংসন বিচারের জন্য মার্কিন সিনেটের ১০০ জন সদস্যই শপথ নিয়ে তাতে অংশগ্রহণ করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে অভিশংসন আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ট্রাম্পের আইনজীবীরা সমাপনী বক্তব্য দেন।
অভিযোগ প্রমাণের জন্য আদালতে উপস্থাপিত বক্তব্যের বাইরে সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে কি না, তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। কোনো সাক্ষ্য ডাকার প্রয়োজন নেই মর্মে সমঝোতা হলে বিচারিক কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্তের দিকে চলে যায়।
বিচার নিয়ে উত্তেজনা ছিল। কিন্তু বিচারের ফলাফল অনেকটাই প্রত্যাশিত ছিল। অভিশংসন আদালতের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রবীণ ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্যাট্রিক লেহি দণ্ড আরোপের জন্য ভোট আহ্বান করেন।
আগের অবস্থান থেকে একজন রিপাবলিকান সিনেটর তার অবস্থান পরিবর্তন করে ভোট প্রদান করেন। ফলে সাতজন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তারা হলেন সিনেটর রিচার্ড বার, বিল কেসেডি, সুজান কলিন্স, লিসা মারকাউস্কি, মিট রমনি, বেন সাসেই ও প্যাট টোমি।
প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ভোট প্রদান করেছিলেন। সিনেটে অভিশংসন দণ্ড দেওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়া রিপাবলিকান সিনেটরদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। অঙ্গরাজ্য রিপাবলিকান কমিটি থেকে এসব আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু হয়েছে।
ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র এক টুইটবার্তায় বলেছেন, এখন দলের তালিকায় নাম থাকা এসব রিপাবলিকানকে উচ্ছেদ করার কাজ শুরু হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct