নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: সরকারি হাসপাতালে তালা ঝোলানো। প্রাণী স্থাস্থ্য কেন্দ্রে নেই চিকিৎসক। গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য নাজেহাল অবস্থা স্থানীয়দের। “সরকারি হাসপাতালে কেন কোনো চিকিৎসক নেই?” বহুবার এই প্রশ্ন করলেও মেলেনি কোনো উত্তর। অবশেষে বিক্ষোভে নামলেন গবাদি পশুপালকরা। শনিবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর প্রাণী স্বাস্থ্য-কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে স্থানীয়রা।
হরিশ্চন্দ্রপুর প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে আছে প্রয়োজনীয় আসবাব, চিকিৎসা সামগ্রী। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই কোনও চিকিৎসক। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পালনকারীরা তাঁদের প্রাণীর চিকিৎসাসেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,দীর্ঘদিন ধরে কোনো চিকিৎসক না থাকায় বাড়িমুখী হতে হয় তাদের। একজন কম্পাউন্ডার ও একজন অফিস সহায়ক চালাচ্ছেন হাসপাতালটি। তবে তারাও গরহাজির। আর প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গোটা হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মানুষের একমাত্র কেন্দ্র। সেখানে চিকিৎসাকেন্দ্রে কোনো পদে লোক নেই। অনেকটা পরিত্যক্তও হয়ে আছে হাসপাতালটি। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকার পরও চিকিৎসক না থাকাই প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। রোগাক্রান্ত সাধারণ গৃহপালিত পশুকে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। যেহেতু অবকাঠামো ও সব চিকিৎসা সরঞ্জাম এখানে রয়েছে, তাই এখানে চিকিৎসক ও অন্যান্য পদে নিয়োগ করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেছেন পশুপালকরা।
কাশিমপুরের পশুপালক সদানন্দ সরকারের অভিযোগ, ‘হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজ্য প্রানী স্বাস্থ্য কেন্দ্রীয় বন্ধ থাকায় অনেক দিন ধরেই ঘুরে যেতে হয়। রাজ্য প্রানী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ থাকায় গরু, ছাগলের চিকিৎসা করানো হয় না। চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রই ভরসা। যদি এটি থেকে পরিষেবা না পায় তাহলে আমাদের প্রাণী সম্পদ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। পশু পালন করা সম্ভব হবে না! আমরা চাই স্বাস্থ্য কেন্দ্র সময় মতো খোলা হোক ও চিকিৎসক নিয়োগ করা হোক।’
মহম্মদ ইউসুফ আলি জানান, ‘আমরা এর আগেও গরু ছাগল নিয়ে ঘুরে গেছি। বলছে হাসপাতাল খোলা হবে না। কোনো ডাক্তারের পাত্তা নেই। তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা জানতে চাই সরকারি হাসপাতাল কেন বন্ধ থাকবে?’
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের কর্মাধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের দাবি, ‘প্রাণী মিত্র,প্রাণী সহায়ক রয়েছে কেন্দ্রে। তবে চিকিৎসক না থাকলেও মহেন্দ্রপুরের একজন চিকিৎসককে রাখা হয়েছে। আজকে তার মায়ের চক্ষু অপারেশন ছিল তাই আসতে পারেনি। তবে প্রানী মিত্ররা কেন আসলো না তা দেখছি বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিএলডিও সুজয় তামাং অবশ্য জানিয়েছেন, ‘স্থায়ী কোনো চিকিৎসক নেই। সব স্থানন্তর হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার জন্য একজন চিকিৎসক রয়েছে। তাকে দুটি সেন্টার চালাতে হচ্ছে। তবে বিষয়টি তিনি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।’
রাজ্য সরকার প্রাণী সম্পদ বিকাশের মাধ্যমে পালকদের স্বনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন রকম সরকারি ভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে প্রানীর রোগমুক্তের জন্য কেন্দ্রটি কেন চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে? তাই প্রশ্ন তুলছে এলাকাবাসী।
শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো পযর্ন্ত বিক্ষোভ দেখাতে থাকে গবাদিপশু পালনকারীরা। কিন্তু সাড়া মেরেনি প্রশাসনের তরফ থেকে। গ্রামবাসীরা বলছেন, না প্রাণী স্বাস্থ্য খোলা হয়েছে আর না কোনো আধিকারিক পরিদর্শনে এসেছে। তাই অসুস্থ গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন পশুপালনকারীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct