এহসানুল হক, বসিরহাট: তেলের খনির সন্ধানে ডিনামাইট চার্জ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কবলে আস্ত কয়েকখানি গ্রাম। খেতের ফসল, বসতবাড়ি, স্কুল, আই সি ডি এস কেন্দ্র, ধর্মীয়স্হান ক্ষতিগ্রস্ত। অভিযোগের তীর ও এন জি সি’র দিকে।আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা শরনাপন্ন বিডিও’র। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানিয়ে বুধবার ৯৩টি আবেদন জমা পড়েছে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে। বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্না বিশ্বাস জানান, ও এন জি সি এসেছিল তেল সন্ধানের কাজে। তারা ডিনামাইট চার্জ করে সন্ধান কাজ চালাচ্ছে বাদুড়িয়ায় বিভিন্ন স্থানে। রায়পুরেও তারা সন্ধান চালাচ্ছিল। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে দেখতে গ্রামে গিয়েছিলাম। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামবাসীরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বিষয়টি। সেই কথাবার্তা চলছেন ও এন জি সি’র কর্তৃপক্ষের সাথে। মানুষের কথা ভেবে আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এই মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়। কী কারণে ঘরবাড়িতে ফাটল ধরেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে একথা ঠিক।
ঘটনাস্থল উত্তর২৪পরগনার বাদুড়িয়া ব্লকের বাগজোলা পঞ্চায়েতের চারটি মৌজা যথাক্রমে রায়পুর,খাজরা,বেগমপুর ও চন্ডীপুর।এর মধ্যে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রায়পুর গ্রাম।আনুমানিক শতাধিক বসতবাড়ি, জমিতে থাকা সরষে,কাকরুল,পটল,হলুদ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।জানান কৃষক এনায়েত মণ্ডল।
সম্প্রতি উত্তর২৪পরগনার অশোকনগরে তেলের খনির সন্ধান মিলেছে ও এন জি সি।কতৃপক্ষের ধারনা শুধু অশোকনগর নয়।গোটা সুন্দরবনাঞ্চলে মিলতে পারে অপরিশোধিত তেলের ভান্ডার।সেই ধারনা থেকে বাদুড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় সন্ধান চালাচ্ছে ও এন জি সি।বাদুড়িয়ার যদুরাহাটি দক্ষিণে সন্ধান চালানো হয়।সেখানেও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়ে।যদিও ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয় ও এন জি সি কর্তৃপক্ষ।স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেই চলছে সন্ধান কার্য।তেমনটি বিডিও বাদুড়িয়া জানান।তবে এ ক্ষেত্রে যা অভিযোগ উঠছে তা হলো স্থানীয় প্রশাসন জানলেও কৃষক জানতে পারছে যে তার জমিতে ডিনামাইট নিয়ে হাজির ও এন জি সি। রায়পুরে পদ্মা খাল পাড় এবং কলমিখুড়ো বিলের কৃষক সাহাবুদ্দিন মণ্ডল, আবদুল কুদ্দুস, আবদুর রহমানরা জানতে পারছেন তখন যখন প্রচণ্ড শব্দে কেপে উঠলো ঘরবাড়ি।আতঙ্কে ঘর ছেড়ে মানুষ তখন খোলা আকাশের নিচে।স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সাহানুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রধান বলেছিলেন এই ধরনের কাজ হবে।কিন্তু এমন ক্ষতি করে দেবে তা আমাদের জানা ছিল না।গত একমাস আগে ডিনামাইট চার্জ করেছিল।কোন ক্ষতি হয়।কিন্তু এবার অর্থাৎ গত শনিবার ৫০-৬০বার ডিনামাইট ফাটানো হয়।রবিবার বেলা১টা থেকে বিকাল৪টে পর্যন্ত প্রায়১৫০বার ডিনামাইট চার্জ করে।মূহুর্মূহু চার্জে কেপে ওঠে ঘরবাড়ি।গ্রামের মানুষ রাস্তায় আতঙ্কে সিঁটিয়ে যায়।এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা একটি জলশূন্য পুকুরে৩০-৪০মিটারের মধ্যে দু জায়গায় ৭০-৮০ফুট গর্ত খুঁড়ে ডিনামাইট ফাটানো হয়েছে।ফাটানোর পর নিচ থেকে জলের ধারাকে ২০-৩০ফুট উপরে তুলে ফেলেছে।এতটাই শক্তিশালী ডিনামাইট।বুধবার দুপুরে গ্রামে পৌঁছাতেই দেখা মানুষের আতঙ্কিত বেশকিছু মুখ।ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ফসলের জমিতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির দেওয়াল,মেঝেতে ফাটলের চিহ্ন,ফসলের খেত দফারফা।কৃষক তড়িকুল ইসলাম জানায় তার জমিতে বোরিং করে ডিনামাইট চার্জ করেছিল ও এন জি সি নিয়োজিত ঠিকাদারি সংস্থা।ক্ষতিপূরণ বাবদ তাকে দুশো টাকা দিয়েছিল।কিন্তু সংস্হার হয়ে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা তাকে জানিয়েছে১৫০০টাকা দেওয়ার কথা।এখানেও সেই কাটমানির গল্প।কাটমানি যেন ছোয়াছে রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।রসিকতা করে জানালো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামেরই এক যুবক।
প্রশ্ন উঠছে একমাস আগে ডিনামাইট চার্জ করে কোন ক্ষতি হলো না।তাহলে এবার কী কারনে এই ক্ষয়ক্ষতি?প্রশিক্ষকহীন কোন কর্মীদের কাজে লাগানো হয়েছে?না কী প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীর গাফিলতির কারনে ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে কৃষক সহ গ্রামবাসীদের?সবটাই তদন্ত সাপেক্ষ।তবে ক্ষতিপূরণ আদৌও কতটা বাস্তবিক এবং যদি তা সত্যে প্রমাণিত হয় তবে আমফানের টাকা লুটের নুতন কাহিনী রচিত হবে না তো?উঠছে এরকম একাধিক প্রশ্ন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct