মারামারি, ভাঙচুর বা রাগ দেখানো অনেক মানসিক রোগের সাধারণ উপসর্গ। এসব মানসিক রোগের মধ্যে আছে বাইপোলার এফেকটিভ ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, বিষপ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা ইত্যাদি । এই নিয়ে আলোকপাত করেছেন স্বনামধন্য সুচিকিৎসক - ডাঃ প্রকাশ মল্লিক এম.ডি (হোমিও) (ধন্বন্তরী)। সিনিয়র সুপার স্পেশালিস্ট হোমিওপ্যাথ। মো ৯৮৩০৫০২৫৪৩ / ৯৮৩০০২৩৪৮৭
কিছু কিছু মানুষ পাওয়া যায় যীরা এসব রোগে ভূগছেন না কিন্তু হঠাৎ খুব সাধারণ কারণে এমন রেগে যান যে আশপাশের সবাই হতভম্ব হয়ে যান। ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন যে তার রেগে যাওয়াটা ঠিক স্বাভাবিক নয় কিন্তু তিনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না। এই মানসিক রোগকে হঠাৎ রেগে যাওয়া বা ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বলে।
এই রোগের বৈশিষ্ট হল, ব্যক্তি অধিকাংশ সময় তার রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে অন্যকে আঘাত বা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করেন। যে ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যক্তি রাগ প্রকাশ করছেন সে ঘটনার বিচারে ব্যক্তির রাগের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি ব্যক্তি অন্য কোনও মানসিক রোগে বা ব্যক্তিত্বের সমস্যায় ভুগছেন না কি কোনও মাদকের প্রভাবেও এধরনের আচরণ করছেন না।
হঠাৎ রেগে যাওয়া রোগের কারণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। এই রোগের প্রকোপ খুব বেশি নয় বলেই ধারণা করা হয়। সাধারণত পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। অল্প পরিমাণে হলেও মহিলাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। বিশেষতঃ মাসিকের ঠিক আগে অনেক মহিলাকে এই রোগে ভূগতে দেখাযায়। এই রোগের চিকিৎসার জন্য মনোচিকিৎসা ও ওষুধ এই দুয়ের প্রয়োগের দরকার হয়। মনোচিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে রাগ নিয়ন্ত্রণের নানা কৌশল শেখানো হয়।
এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের বিষপ্নতা বিরোধী ওষুধ ও কার্বামাজোপিন, লিথিয়াম, ডাইভেলপ্রো এক্স ইত্যাদি । বাধ্যতাধর্মী অসুস্থতাও এক ধরনের মানসিক রোগ । এ রোগে কিছু নির্দিষ্ট চিন্তা ব্যক্তির মনে ঘুরে ঘুরে বার বার আসে । এসব চিন্তা ব্যক্তির নিজের মনেই তৈরি হয়। ব্যক্তি এসব চিন্তা মন থেকে দূরে সরাতে চায় কিন্তু পারে না।
এই রোগে ঠিক কী ধরনের চিন্তা মনে আসে? বস্তৃত বিভিন্ন অবাস্তব ও অদ্ভুত ধরনের চিস্তাই তাদের মনে ভিড় করে আসে। চিন্তাগুলোকে ৫ ভাগে ভাগ করে বর্ণনা করা যায়। এগুলো হচ্ছে জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের চস্তা, কোনওএকটা কাজ ঠিকমতো করেও তা করা হয়নি এ ধরনের দ্বিধা, সবকিছু একটা নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে সাজানোর ইচ্ছা, কারও ক্ষতি করার ইচ্ছা, অস্বাভাবিক যৌনচিন্তা।
শুধু কি এ জাতীয় ব্যক্তিই এমন চিন্তা করে । অনেকের মধ্যেই এমন চিন্তা থাকে । অধিকাংশ ব্যক্তি এসব চিন্তা থেকে মনকে অন্যদিকে ঘোরাবার জন্য যতগুলো কাজ করে যেমন বার বার হাত ধোয়া, গণনা করা, বার বার পরীক্ষা করা, একই কাজ বার বার করা ইত্যাদি। এসবকে বলে কম্পালশন। কম্পালশনের রোগী বার বার হাতধোয়া বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত সজাগ থাকে।
এই রোগের কারণ কী? আগে মনে করা হতো ছোটবেলায় কঠিন শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়ার ফল হিসেবে এই রোগের উৎপত্তি হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই তত্ত্ প্রমাণিত হয়নি । গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের স্ট্রায়েটাম নামের অংশের গোলমালের ফলে এই রোগের উৎপত্তি হয়। এই রোগের চিকিৎসা আছে। সাধারণত ওষুধ ও বিহ্যাভিয়ার থেরাপির সমন্বয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। বিহেভিয়ার থেরাপির ক্ষেত্রে এক্সপোজার ত্যান্ড রেসপেন্স প্রিভেনশন পদ্ধাতি ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা বলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct