ফৈয়াজ আহমেদ: ঘরে-বাইরে কোথাও মাকড়সা দেখলে আঁতকে ওঠে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই মাকড়সা নিয়ে আমাদের যা ধারনা আছে তার বাইরেও আরো বিষাক্ত প্রাণঘাতি মাকড়সাও পৃথিবীতে আছে।
এখন জানা যাক সামগ্রিকভাবে বিষাক্ত কিছু মাকড়সা সম্বন্ধে যাদের নিয়ে মানুষের চিন্তার কারণ আছে।
ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডার: অনেকটা দক্ষিণ আমেরিকার উলফ স্পাইডারের মতো দেখতে হলেও ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডার আকারে বড় এবং এর বিষের শক্তিমাত্রা বেশি। এই ধরনের মাকড়সার বিষ স্নায়বিকভাবে খুবই সক্রিয়। একে মাকড়সাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষধর এবং বিপদজনক বলে মনে করা হয়ে থাকে। সাধারণত এই প্রজাতির মাকড়সা প্রতিটি কামড়ের সাথে শক্তিশালী সেরোটনিন (Serotonin) সমৃদ্ধ বিষ প্রয়োগ করে যা মাংসপেশীতে তীব্র চোটের (Muscle shock) সৃষ্টি করে। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় যা একপর্যায়ে পক্ষাঘাতের সৃষ্টি করে।
ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার: মাকড়সা জগতে ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডারিং স্পাইডারের পরেই ব্ল্যাক উইডো স্পাইডারকে (Black widow spider) স্থান দেয়া হয়। এই কুখ্যাত প্রজাতির মাকড়সাকে এদের পেটে রঙিন বালিঘড়ির চিহ্ন দেখে শনাক্ত করা যায়। এই প্রজাতির মাকড়সা সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বসবাস করে থাকে। পুরোনো ধাঁচের বাড়ি, কাঠের বাড়ি অথবা কাঠের স্তূপ এদের জন্য উপযুক্ত বসবাসের জায়গা। মজার ব্যাপার হলো, এই প্রজাতির স্ত্রী মাকড়সাই বেশি দেখা যায়, কারণ পুরুষ মাকড়সার সাথে মিলনের পরেই স্ত্রী মাকড়সা এদের খেয়ে ফেলে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই প্রজাতির নাম হয়েছে উইডো অর্থাৎ বিধবা।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এই মাকড়সার কামড়ের জন্য প্রায় ৬৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ড আছে। একই সাথে জানা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বিষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে (Poison Control Center) প্রায় ২,৫০০ জন ভর্তি হয় শুধুমাত্র এই প্রজাতির মাকড়সার কামড়ের কারণে।
সিডনি ফানেল ওয়েব স্পাইডার: অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী এই প্রকার মাকড়সাকে প্রথম শ্রেণীর বিষাক্ত মাকড়সাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সিডনি ফানেল ওয়েব (Sydney Funnel Web) মাকড়সার বিষদাঁত মাকড়সা জগতের মধ্যে সবথেকে বেশী নিখুঁত। এদের বিষদাঁত কতিপয় প্রজাতির সাপের থেকে উন্নত। তীক্ষ্ণ, সূচালো এই দাঁতের সাহায্যেই এই মাকড়সা এদের শিকারকে বা উত্যক্তকারীকে কামড় দেয় এবং বিষ প্রয়োগ করে। এদের দাঁত এতটাই তীক্ষ্ণ যে, চামড়ার জুতার ভেতর দিয়ে, এমনকি নখের উপর দিয়ে এরা কামড়াতে পারে। এদের বিষে অ্যাট্রাকোটক্সিন (Atracotoxin) নামক একপ্রকার যৌগ থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
রিক্লজ স্পাইডার: রিক্লজ স্পাইডারের (Recluse spider) মধ্যে দুই ধরনের মাকড়সার উল্লেখ পাওয়া যায় যারা বিষাক্ত। এরা হলো ব্রাউন রিক্লজ স্পাইডার এবং চিলিয়ান (Chilean) রিক্লজ স্পাইডার। মাথায় বেহালার মতো চিহ্ন থাকায় ব্রাউন রিক্লজ স্পাইডার ‘ভায়োলিন স্পাইডার’ বা ‘ফিডলার’ নামেও পরিচিত। ব্রাউন রিক্লজ স্পাইডারের কামড় বিষাক্ত হয়ে থাকে। যদিও এদের কামড়ের ফলে কোনো মৃত্যুর রেকর্ড পাওয়া যায় না। এরপর আসে চিলিয়ান রিক্লজ স্পাইডার। এরাও ব্রাউন রিক্লজের মতো বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এদের বিষক্রিয়াও মাংসপেশী ও টিস্যুর ক্ষয় করে থাকে।
সিক্স আইড স্যান্ড স্পাইডার: এই প্রকার মাকড়সা সাধারণত আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের রিক্লজ মাকড়সাদের নিকটাত্মীয়ও বলা যেতে পারে। আকারে খানিকটা কাকড়ার মতো চ্যাপ্টা হওয়ার কারণে এদের ‘ক্র্যাব স্পাইডার’ও বলা হয়ে থাকে। মরুভূমির বালির মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা এই মাকড়সা যেকোনো প্রাণীর জন্যেই আততায়ীর মতো ভূমিকা পালন করে। মানুষের ক্ষেত্রে এদের কামড়ের ক্ষেত্রে কোনো সঠিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। ফলে এরা মানুষের জন্য কতটা বিষধর তা জানার উপায় নেই।
মাকড়সাভীতির বাইরেই অধিকাংশ মানুষের কাছেই মাকড়সা একটি ছোটখাট পতঙ্গ ছাড়া আর কিছুই না। এটা হতে পারে এই কারণে যে, আমাদের আশেপাশে যেসব মাকড়সা আছে তারা নিরীহ প্রকৃতির বা অতটা বিষাক্ত নয়। কিন্তু অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত, কারণ কখন কোন মাকড়সার কামড়ে কী ক্ষতি হয়ে যায়!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct