বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিবাদ এখন স্তিমিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিষয়টির ফয়সালা করা হলেও তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। যদিও ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামন্দিরের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। অযোধ্যায় অতীত হয়ে উঠছে বাবরি মসজিদের ইতিহাস। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও বাবরি মসজিদ-রামমন্দির নিয়ে বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। তাই রামের ইতিহাস থেকে শুরু করে রামমন্দির, বাবর থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ- সমগ্র বিষয়টি নিয়ে এই অনুসন্ধিৎসু প্রতিবেদনটি লিখেছেন দিলীপ মজুমদার। সপ্তদশ কিস্তি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ধ্বংস হয় বাবরি মসজিদ। ১৬ ডিসেম্বর সরকার গঠন করেন লিবেরহান অযোধ্যা কমিশন। মনমোহন সিং লিবেরহান ছিলেন অন্ধ্র প্রদেশ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি । তাঁরই নেতৃত্বে গঠিত হয় এই কমিশন। ৩ মাসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তা কমিশনের পক্ষে সম্ভব হয় নি। ৪৮ বার সময় চেয়ে নিয়ে ১৭ বছর পরে, ২০০৯ সালের ৩০ জুন লিবেরহান কমিশন তাঁদের রিপোর্ট জমা দেন। কমিশন যে সব বিষয়ে তদন্ত করবে বলে ঠিক হয়, সেগুলি হল :
ক] ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় যা যা ঘটেছিল, তার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা,
খ] উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকার পর্যালোচনা,
গ] নিরাপত্তা রক্ষায় কোন গাফিলতি ছিল কি না, তা বিচার করা,
ঘ] সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ হয়েছিল কি না, তার পর্ষালোচনা।
লিবেরহান কমিশন বিষয়ে যে পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তার ভূমিকায় বলা হয় :
ক] ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় যে ধ্বংসকার্য হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক—বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-ভারতীয় জনতা দলের ক্যাডাররা ল তাঁরা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়ভাবে এই কাজকে সমর্থন করেন। সেখানে বহু সাধু-সন্ত, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও করসেবকরাও উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল এই ধ্বংসের পেছনে। রাজ্যের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই উদ্যোগকে বন্ধ করার কোন চেষ্টাই করেন নি।
খ] ভারতের জনগণের একটা বড় অংশ মনে করেন মসজিদ ধ্বংসের ব্যাপারটি ভারতের পক্ষে কলঙ্কস্বরূপ, এটা ভারতের নাগরিকের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ, সুশাসন ও অসাম্প্রদায়িক নীতির বিপরীত।
গ] কেন মসজিদ ধ্বংস করা হল, এর আসল উদ্দেশ্য কী, সে সম্পর্কে নানা মত প্রচলিত। কারও কারও মতে এর পেছনে আছে ষড়যন্ত্র—রাজনৈতিক কিংবা বৈদেশিক। এই কমিশন নিযুক্ত করা হয়েছে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য। [‘ Various speculations were made in the context of the frequent conflicting reports that followed the demolition . The possibility of a conspiracy , domestic or foreign or political, seized the public attention, and raised questions about its extent and otherwise. All this stimulated suspicion and fuelled rumours. With such a large number of people participating from all over the country in the construction movement, either in favour of the movement or against it, it was not possible to arrive at a complete story through the normal judicial process. The nation as sich, needed to find out the facts which had resulted in dilution of the constitutional secularism, proudly claimed on the public platform by one and all, Practically it became increasingly more desirable to find out the truth in order to prevent a similar occurrence in the future. It is desire of humanity, believing in peaceful coexistence, to ensure that such acts are not repeated.’]
রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি ঘোষণা করেন The Acquisition of Certain Area at Ayodhya Ordinance.
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চ্যবন সংসদে এই মর্মে একটি বিল আনেন । তিনি বলেন, ‘ভারতের জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা দরকার ।’ বিলটি পরে আইনে পরিণত হয় । এই আইনে রামজন্মভূমি ও বাবরি মসজিদসহ ৬৭. ৭০৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এই আইনটির বিষয়বস্তুর সূচি:
The Acquisition of Certain Area at Ayodhya Act 1993
Act 33 0f 1993
Arrangement of Sections
Chapter--- 1
Preliminary
Chapter---2
Acquisition of the Area in Ayodhya
Chapter---3
Management and Administration of Property.
Chapter---4
Miscellaneous
ভূমিকায় লেখা হল : ‘ An Act to provide for the acquisition of certain area at Ayodhya and for matters connected therewith or incidental thereto.
‘ whereas there has been a long-standing dispute relating to the structure ( including the premises of the inner and outer courtyards of such structure ), commonly known as the Ram Janmabhumi -- Bbabri Masjid, situated in village Kot Ramchandra in Ayodhya, in pargana Haveli Avadh, in tehsil Faizabad Sadar, in the district of Faizabad of the state of Uttar Pradesh.
‘ And whereas the said dispute has affected the maintenance of public order and harmony between different communities in the country.
‘And whereas it is necessary to maintain public order and promote communal harmony and the spirit of common brotherhood amongest the people of India.
‘ And whereas with a view to achieving the aforesaid objectives , it is necessary to acquire certain areas in Ayodhya.
‘ Be it enacted by Parliament in the forty-fourth year of the Republic of India as follows.’
সুপ্রিম কোর্টে এই অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেন রামলালার ৭ ভক্তসহ শিশির চতুর্বেদি, সঞ্জয় মিশ্র প্রভৃতি আইনজীবী । তাঁরা বলেন যে রাজ্যের জমি অধিগ্রহণের এক্তিয়ার সংসদের নেই। তাঁরা এও বলেন যে এই আইন হিন্দুধর্মের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করছে যা সংবিধানের ২৫নং ধারার বিরোধী।
বিজেপিও আইনটির বিরোধিতা করে। তখনকার বিজেপি সহ সভাপতি এস এস ভাণ্ডারী এই আইনকে ‘পক্ষপাতমূলক, সংকীর্ণ ও বিকৃত’ বলে ( ‘partisan, petty and perverse’ ) বলে উল্লেখ করেন ।
মুসলমানদের পক্ষে ডাঃ ইসমাইল ফারুকিও বিরোধিতা করেন এই আইনের ।
ফলত, সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন । ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেন যে মসজিদটি নমাজের জন্য একমাত্র স্থান নয় ; সংবিধান অনুযায়ী অধিগ্রহণ আইনটি তাই নিষিদ্ধ
হতে পারে না ।--‘( The Mosque is not an essential part of practice of the religion of Islam, and namaz ( prayer) by Muslims can be offered anywhere , even in open. Accordingly, its acquisition is not prohibited by the provisions in the Constitution of India’.
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
এর আগের পর্বগুলি পড়ুন:
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৬
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৫
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৪
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৩
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১২
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১১
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১০
রাম, রামায়ণ ও বাবরি মসজিদ নিয়ে রাজনীতির নেপথ্যে/১
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct