আপনজন ডেস্ক: আবারও চরিত্র বদলাতে শুরু করেছে ব্রিটেনের করোনা স্ট্রেন।এই স্ট্রেনটিকে ই৪৮৪কে নামে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এত দ্রুত তার পালটে যাওয়ার কারণেই হয়তো ভ্যাকসিনেও ঠেকানো যাবে না এই নতুন স্ট্রেনকে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে উদ্বেগ আরও বাড়ছে ব্রিটেন প্রশাসনের। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, একবার করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি আবারো আক্রান্ত এই স্ট্রেন দ্বারা। রাতারাতি ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে ওঠা এই স্ট্রেনকে নিয়েই তাই সতর্ক ব্রিটেন প্রশাসন। কেবল ব্রিটেনের স্ট্রেনই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনটি থেকেও মিউটেশন ঘটিয়ে ই৪৮৪কে স্ট্রেন তৈরি হওয়ার নজির মিলেছে। যেহেতু এই নতুন স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তাই মঙ্গলবার থেকেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে করোনা পরীক্ষা করা শুরু করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা।
অন্যদিকে, ব্রিটেনের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ফিউনারেল ডিরেক্টরস বলেছে, তাদের মর্গে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এর মধ্যেই আসছে মৃতদেহ। অনেক মৃতদেহ ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষায় আছে। শত শত মৃতদেহের স্তূপ মর্গে। উল্লেখ্য, বৃটেনে মৃতদেহ দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ফিউনারেল ডিরেক্টরস। তারা বলেছে, তৃতীয় দফার করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের মর্গ উপচে পড়ছে লাশ। কোনো ফাঁকা স্থান নেই। অনেক পরিবার প্রিয়জনের মৃতদেহ সমাহিত করতে ৫ সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছে।
এই সংস্থা আরো বলেছে, ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডসের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানে বর্ধিত মর্গের জায়গাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। গড়ে সেখানে একটি মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মিরর। তারা বলেছে, ম্যানচেস্টার এবং লিভারপুল ছাড়াও অন্য সব এলাকায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষার সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নকারী কয়েক শত প্রতিষ্ঠানের এখন আর নিজেদের মর্গে আর কোনো ফাঁকা স্থান নেই। গত বছরে তারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন কমপক্ষে ৯০ হাজার মানুষের। শুধু গত মাসেই করোনা ভাইরাসে সেখানে মারা গেছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য সাধারণত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি হলো ব্যস্ত সময়। ব্যারিংটন ফিউনারেল সার্ভিস হলো ৭০ বছর বয়সী ডেভিড বেরিংটনের পারিবারিক ব্যবসা। তিনি বাস করেন লিভারপুলে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিষয়ক অন্যতম পরিচালকও তিনি। বলেছেন, এখন যে পরিমাণ মানুষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে এর আগে কখনো এমনটা হয়নি। আমরা শুধু একটি মৃতদেহ বের করছি। আরেকটি ঢুকাচ্ছি মর্গে। একটি মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন না করা পর্যন্ত আমরা আরেকটি মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে পারবো না। এত্ত মানুষের মৃতদেহ আসছে। তিনি বলেন, আমাদের ৫০ বছরের এই ব্যবসা। কিন্তু কোভিডে মারা যাওয়া মানুষের চেয়ে তরুণ বয়সের মানুষও কম মারা যাচ্ছেন না। আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুব শ্রেণির মৃতদেহ পাচ্ছি। আবার কোনো কোনো পরিবারে দু’তিন জন মানুষও মারা গেছেন। এ সপ্তাহে আমাদের কাছে একজন নারীর স্বামীর মৃতদেহ এসেছে। এখন এসেছে তার পিতার মৃতদেহ। তারা দু’জনেই করোনায় মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, প্রথম দফায় যখন করোনা সংক্রমণ হয়েছিল তখনকার চেয়ে এখন নিয়মনীতি অনেকটা শিথিল করা হয়েছে। ওই সময়ে সব চার্চ ছিল বন্ধ। কিন্তু এখন পরিবারগুলো শেষ বিদায়ে একত্রিত হতে পারেন। তারা প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে পারেন। ইংল্যান্ডে এই সংখ্যা ৩০, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২৫, স্কটল্যান্ডে ৩০ জনে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct