সামিনুর আলম: চিকিৎসক হওয়ার জন্য সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’ হল প্রধান মাধ্যম। তাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে প্রতি বছর রাজ্যের মুসলিম সমাজ থেকে বহু দরিদ্র-মেধাবী ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে তার মধ্যে সিংহভাগই আল আমীন মিশনের ফসল। গ্রাম-বাংলার মেধাকে একসূত্রে বেঁেধ এভাবে এগিয়ে আসতে থাকলে ভবিষ্যতে রাজ্যের শিক্ষাজগতে মুসলিমরাও অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে লিখেছেন
আল আমীন মিশনের প্রাক্তনী ও বর্তমানে এসএ কেএম-এর ডাক্তারি পড়ুয়া সামিনুর আলম।
আশির দশকে হাওড়ার খলতপুরে শিক্ষার যে বাতি জ্বালিয়েছিলেন পেশায় শিক্ষ নুরুল ইসলাম, তার ব্যাপ্তি আজ সাসার বাংলায় প্রসারিত হয়েছে। ক্ষুদ্র সেই প্রতিষ্ঠান আজ মহীরূহ। শিল্পপতি থেকে শুরু করে সমাজসেবী, শিক্ষাবিদ থেকে সাধারণ মানুষের সান্নিধ্য লাভে নুরুল ইসলামে ‘সন্তানসম’ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আমীন মিশন রাজ্যের মুসলিম শিক্ষাজগতে শীর্ষে স্থান করে দিয়েছে।
গ্রামাঞ্চলের মেধাকে এক সূত্রে বেঁধে তার বিকাশ ঘটানোয় নানা সম্মান এনে দিয়েছে আল আমীন মিশনকে। ১৯৫৯ সালের ১৭ অক্টোবর হাওড়া জেলার খলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এম. নুরুল ইসলাম এখন ষাটোর্ধ্ব। তবু তার উদ্যম যুবকদেরও হারা মানিয়ে দেবে। ‘ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচার’ সামে যে প্রতিষ্টোনের সুচনা সেটাই আজ আল আমীন মিশনে রূপ নিয়েছে। আর এখান থেকে শিক্ষার্জনের মাধ্যমে প্রতি বছর শয়ে শয়ে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এটা সম্ভব হয়েছে নুরুল ইসলাম স্যােরের মনের উদ্যম ইচ্ছা ও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকার জন্যই। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নুরুল ইসলাম স্যার।
অনুন্নত এলাকা থেকেও দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মিশনের আনার মাধ্যমে পথ চলা স্বপ্ন দেখাচ্ছে অবশিষ্টদেরও। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের শিক্ষাবিপ্লব আনতে শুধু একটি আবাসিক মিশন যথেষ্ট নয় সেটা আগে বুঝতে পেরেছিলেন নুরুল স্যার। তাই পশ্চিমবঙ্গের সব জেলা জুড়ে শুরু হল আল-আমিন মিশনের বিভিন্ন শাখা তৈরির প্রকল্প। রাজ্যের ১৭ টি জেলা জুড়ে ৭০ টি শাখা ছড়িয়ে আছে; এই রাজ্য ছাড়াও, অসম, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো অন্যান্য রাজ্যেও এখন বিস্তৃত।
পশ্চিমবঙ্গের ৭০টি শাখা তৈরির পেছনে রয়েছে তাঁর কঠোর পরিশ্রম। তাঁর নিরলস পরিশ্রম, স্বপ্নকে ছোঁয়ার অদম্য জেদ ও প্রখর দূরদৃষ্টির জন্য মাত্র ৩৪বছরে আল আমীন মিশনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭জন থেকে ২০হাজারে পৌঁছেছে। এখনও পর্যন্ত মিশন থেকে পাশ করে বেরিয়েছে ২৯হাজার ছাত্র ছাত্রী। যার মধ্যে ৪০০০ ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মী এবং ৪০০০-এর উপর ইঞ্জিনিয়ার। কেউ তার মতোই মানুষ গড়ার কারিগর, আবার কেউ বা করছেন গবেষণা। অনেকেই আজ উচ্চপদে কর্মরত সরকারী কর্মচারী। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কান পাতলেই শোনা যাবে আল অামীন মিশনের ছাত্রছাত্রীদের পদচারণা। আল আমীন মিশনের সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য আক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল।
মেধাকে চেনা আর তার সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দৃষ্ঠান্ত স্তাপন করে চরেছে আল আমীন মিশন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই সাধারণ মুসলিম সমাজে এককথায় আল আমীন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের সাফল্যের সোপান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
প্রতি বছরের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট, ডব্লুবিসিএস-এর রেজাল্ট প্রমাণ করে আল আমীন মিশন মুসলিম সমাজকে কতটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। আল আমীন মিশনের প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে তাই বঙ্গভূষণের মতো সম্মানজনক শিরোপা পেয়েছেন। জাতি ও দেশ গঠনে দেশের এই মহান শিক্ষকদের অবদান সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা দরকার আগামী প্রজন্মকে।
তবে, আমার মতো প্রাক্তনীরা গর্বিত আল আমীন পরিবারের একজন হতে পেরে। তাদেরকেও সমাজের কল্যঅণে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও মুসলিম সমাজের শিক্ষা সাফল্যে যে অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে তাকে পাথেয় করে আরও মিশনারি মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। আগামীতে বাংলার মুসলিমরা শিক্ষার আলো ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সেটাই তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরণা। এই প্রেরণা রাজ্যের শিক্ষাজগতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে সেই আশা করাই যায়। তখন হয়তো কোনও দরিদ্র মেধা আর বিকশিত হতে বাদ যাবে না, বাংলার শিক্ষাজগতে হয়ে উঠবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
লেখক আল আমীন মিশনের প্রাক্তনী ও বর্তমানে এসএকেএম হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct