জাইদুল হক: কিছুদিন আগে এ রাজ্যে এসে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ফুরফুরা শরীফে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকের পর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছিলেন, তার দল বাংলায় আব্বাস সিদ্দিকীর দেখানো পথে হাঁটবে। এরপর পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ নামে নতুন দল গঠন করেছেন। আব্বাস সিদ্দিকী এরপর এগিয়ে চলেছেন জোট গঠনের জন্য।
এই নতুন দল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী এতদিন ফুরফুরা কেন্দ্রিক ভক্তদের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ না তেকে বিভিন্ন আদিবাসী ও দলিত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অমুসলিম এলাকায় মিটিং মিছিল করছেন। এমনক মতুয়া সম্প্রদায়ের খাসতালুকেও মিটিং করেছেন। তার মিটিংয়ে জনসমাগমও হচ্ছে।
প্রতিটি সভায় আব্বাস সিদ্দিকী তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী জোটের আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু যে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আব্বাস সিদ্দিকীর নীতিতে এ রাজ্যে চলার ঘোষণা দিয়েছিলেন, নতুন দল ঘোষণার পর থেকে কিন্তু ওয়াইসির তরফে এই দলকে সমর্থন কিংবা তার জোটকে সমর্থনের ব্যাপারে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, বাম কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আহ্বান জানিয়ে আব্বাস সিদ্দিকী বার্তা দিয়েছেন যারা এতদিন আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মুসলিম ভিত্তিক দল ‘মিম’-এর ওপিঠ-ওপিঠ বলছিলেন আদতে তা নন। তিনি যে বাংলার সমস্ত পিছিয়ে পড়া মানুষেরে ইনসাফ আদাযের লক্ষ্যে এই দল গড়েছেন তা ক্রমশ পরিষ্কার হযে যাচ্ছে। তাই আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বাংলার রাজনীতে প্রবেশ করতে চাইছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরুর করেছে। কারণ, মিম-এর মুসলিম কেন্দ্রিক রাজনীতি আর আব্বাস সিদ্দিকীর রাজ্যের ‘মুসলিম-আদিবাসী-দলিত’-দের নিয়ে রাজনীতির মধ্যে নীতিগত কারণে ফারাক তৈরির সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে।
এতদিন ওয়াইসি আব্বাস সিদ্দিকীর নির্দেশ অনুসরণ করে রাজ্যে চলা কথা বললে এবার এ রাজ্যে মিম-এর প্রাসঙ্গিকতা বিচারে ও গ্রহণযোগ্যতা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন জেলায় পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। এ ব্যাপারে মিম-এর সাধারণ সম্পাদক ও ইয়াকুটপুরার মিম বিধায়ক সৈয়দ আহমেদ পাশা কাদরীর সই সম্বলিত পশ্চিমবাংলার জন্য পর্যবেক্ষক তালিকার চিঠি ‘আপনজন’-এর হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩১.০১.২০২১ তারিখে লেখা ওই চিঠিতে রাজ্যের ১৬টি জেলার জন্য মিম-এর পর্যবেক্ষকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই জেলার তালিকায় কলকাতা সহ উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলিই প্রাধান্য পেয়েছে। তবে, পর্যবেক্ষক দলকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে পাঠানো হচ্ছে।
কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের জন্য (হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা) বিধায়ক জাফর হোসেন মিরাজ এবং মির্জা রিয়াজ উল হোসেন। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও নদিয়ার জন্য বিহারের এবিহারের আমৌরের বিধায়ক আখতার উল ইমান এবং বিহারের মিম-এর যুব সভাপতি আদিল হাসান। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের জন্য বিহারের জোকিহাটের বিধায়ক শাহনাওয়াজ ও কোচাধামানের বিধায়ক হাজি ইজহার আসফি এবং মালদার জন্য বিহারেরই দুই বিধায়ক সৈয়দ রুকনুদ্দিন আহমেদ ও আনজার নায়েমি।
মিম-এর এই পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিযে ইতিমধ্যে নানা জল্পনা শুরু হযে গিয়েছে। এ ব্যাপারে যদিও পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তাদের কাছে খবর এসেছে যে মিম-এর পর্যবেক্ষক দর এ রাজ্যে আসছেন। এটার মিম-এর নিজস্ব সাংগঠনিক ব্যাপার বলে অভিহিত করেন। মিম-এর সঙ্গে জোটের কথা প্রকাশ্যে এখনও আব্বাস সিদ্দিকীর দল ঘোষণা করেনি। নওশাদ সিদ্দিকীও তার দলের তরফে মিম-এর সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করতে চান না। নওশাদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তার আর পাঁচটা দলের মতোই মিম-কে দেখছেন। তাই আলাদা করে জোটে মামিল বলার দরকার নেই। যখন জোট ঘোষণা হবে তখন জানানো বে কারা কারা থাকছে জোটে। কারণ, এখনও বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট নিয়ে কথাবার্তা চলছে।
জোট নিয়ে কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কথা চলছে। জোটে কারা কারা থাকছে ঘোষণা করা হবে ৬ ফেব্রুয়ারি।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে মিম-এর সাধারণ সম্পাদক মিম বিধায়ক সৈয়দ আহমেদ পাশা কাদরীকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি ‘আপনজন’-কে বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তাকে তার সই সম্বলিত চিঠির কথা উল্লেখ করলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct