মহম্মদ নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: রুল থেকে রং কিংবা অয়েল কালার হাতের কাছে যা পারছে তাই দিয়ে সাদা কাগজে ফুটিয়ে তুলছে চমকপ্রদ ছবি। যা দেখে গোটা রাজ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেনীর পড়ুয়া মনোজিৎ মাইতি। মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠরত মনোজিৎ মাইতি একেবারে ম্যাজিক করে দিয়েছে যাকে বলা যায়। তার বয়সী সবাই যখন ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণীর অঙ্ক কষতে গলদঘর্ম, সেই বয়সেই দূর্দান্ত সব ছবি এঁকে সকলের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে এই খুদে। বছর এগারোর এই খুদে লকডাউন, দূর্গাপুজা, বিভিন্ন উৎসব থেকে শুরু করে, পোর্ট্রেট সবকিছু তুলির টানে ফুটিয়ে তুলে অবাক করছে সবাইকে। বাবা মা পেশায় শিক্ষকতা করেন। ছোটোবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল মনোজিৎ এর। খুব ছোট্ট বয়স থেকে রং পেনসিলের সাথে জুড়ে যায় এই প্রতিভাবান ছেলেটি। প্রথম শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রথম আঁকা শিখতে শুরু করেছিল মনোজিৎ। দুই বছর শেখার পর বাড়িতেই নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে, এমনটাই জানা গেছে পরিবার সূত্রে। এরপর লকডাউনের আগে আবার মাস দুই আঁকার স্যারের কাছে যায় সে কিন্ত লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তা আর সম্ভব হয়নি। তখন থেকে বাড়িতে নিজেই একের পর এক দূর্দান্ত সব ছবি এঁকে ফেলেছে সে। বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বড্ডো ভালোবেসে অংশ গ্রহণ করে এবং যথারীতি প্রাইজও তুলে আনে। ব্লক স্তরে, জেলা স্তরে, রাজ্য স্তরে সবেতেই অংশ গ্রহণ করেছে এই ক্ষুদে। তার মধ্যে ব্লক স্তরে ও জেলা স্তরে প্রথম স্থান অধিকার করে মা বাবার নাম উজ্জ্বল করেছে মনোজিৎ। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ন্যাশনাল স্তরে এবং ইন্টারন্যাশনাল স্তরের প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করে সে। মনোজিৎ এর মা মনোমিতা মাইতি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ছেলের কৃতীত্বের প্রসঙ্গে জানালেন, "ও ভালোবেসে ড্রয়িং করে,আমরা কোনোদিনই বাধা দিইনা, ও নিজের ইচ্ছেমতো করে। দুই বছর আঁকা শিখেছিল তারপর বাড়িতেই প্র্যাকটিস করে। আমরা চাই ও যেটাকে ভালোবাসে সেই দিকেই এগিয়ে যাক। ও উঁচু ক্লাসে উঠে যদি অ্যানিমেশন নিয়ে পড়তে চায় সেটা নিয়েই পড়াবো।"এইদিন এই ক্ষুদে তার সাক্ষাৎকারে বলল, "আমি ক্লাস ওয়ান থেকে দুই বছর আঁকা শিখেছিলাম। এখন বাড়িতেই করি। ল্যান্ডস্কেপ এবং পোর্ট্রেট আঁকছি। এছাড়াও অশ্বথ পাতার উপরেও ড্রয়িং করেছি আমি।"বড়ো হয়ে কী করতে চায় জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, পড়াশোনার সাথে যুক্ত থাকতে চায় এবং তার সাথে আঁকাটাকেও সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ক্রিকেটেও একই রকমভাবে আগ্রহ রাখে সে, এমনটাই জানালো বছর এগারোর ক্ষুদে মনোজিৎ।ছোট শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি তারা যা করতে চায় তাতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। কে বলতে পারে আপনার বাড়ির বাচ্চা তার মধ্যেই হয়তো ভবিষ্যত প্রজন্মের কোনো শিল্পী লুকিয়ে থাকতে পারে? আর বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য খুব বেশি দূরে যেতে হয়না, বাড়িতে বসেই অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই কারুর মধ্যে যদি সত্যিইকারের ট্যালেন্ট থাকে তাহলে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাওয়া কোন ব্যাপার নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct