ফৈয়াজ আহমেদ: মরুভূমি এক অদ্ভুত জায়গা, আর ততটাই অদ্ভুত সেখানকার উদ্ভিদকূল। চারদিকে যতদূর চোখ যাবে, দেখা যাবে শুধু ধূসর বালু। তবে মাঝে-মধ্যে চোখে পড়বে অদ্ভুত সব আকৃতির উদ্ভিদ, যেগুলোর সাথে আমরা সচরাচর পরিচিত নই। এসব উদ্ভিদ মরুভূমির তীব্র দাবদাহে টিকে থাকবার জন্য পাতার বদলে কণ্টক জন্মায়। এদের দৈহিক গঠন এমন যে, তা সবসময়ই ভবিষ্যতের জন্য জল জমা করে রাখতে পারে। এদের অধিকাংশের মূলই মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত যায়, কেননা মরুভূমিতে সহজেই জল পাওয়া সম্ভব না। এরকমই ১০টি অদ্ভুত আর বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
১. ওয়েলউইটসিয়া মিরাবিলিস
দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে, কিছু ছেঁড়া কাপড় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরেকটু কাছে গেলে মনে হবে বুঝি কাণ্ডবিহীন একটি উদ্ভিদ, যার রয়েছে এলোমেলো অসংখ্য পাতা। তবে একেবারে নিকটে পৌঁছুলে দেখবেন, কাণ্ড এর নেই ঠিকই, তবে পাতা
পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘায়ু উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ওয়েলউইটসিয়া সর্বোচ্চ ১৫০০ বছর বাঁচতে পারে!
২. ব্যারেল ক্যাকটাস
আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মরুভূমিগুলোতে অদ্ভুত সুন্দর এই ব্যারেল ক্যাকটাসগুলো প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। সৌন্দর্যের পাশাপাশি এটি বিপদজনকও বটে। এর ফাঁপা নলাকার শরীর জুড়ে আছে ৪ ইঞ্চি লম্বা মোটা কণ্টক, যা একে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অগভীর শেকড়বিশিষ্ট এ উদ্ভিদ ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো, ব্যারেল ক্যাকটাসকে মাটি থেকে তুলে রেখে দিলেও তা অনধিক ৬ বছর বাঁচতে পারে! তবে নির্বিঘ্নে মাটিতেই থাকতে দিলে একেকটি ব্যারেল ক্যাকটাস প্রাকৃতিক সব প্রতিকূলতা জয় করে দেড়শো’ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
৩. বেসবল প্ল্যান্ট
দেখতে হুবহু বেসবলের মতো এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইউফোরবিয়া ওবেসা’। এর এমন চেহারাই এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের তালিকার সবচেয়ে দুর্ভাগা এ উদ্ভিদ পাওয়া যায় কেবল নার্সারি আর বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলোতে।
৪. বাওবাব গাছ
আফ্রিকা, আরব আর অস্ট্রেলিয় মরুভূমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে জন্মায় এই অদ্ভুত গাছগুলো, যদিও এদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সদস্য পাওয়া গেছে মাদাগাস্কারেই। কেবল মরুউদ্ভিদ নয়, সমগ্র উদ্ভিদকূলের মধ্যেই সবচেয় বেশি পরিমাণ জল ধারণ করতে পারতে এই বাওবাব গাছগুলো। এই গাছের মোটা গুঁড়িগুলো ১-১.২ লক্ষ লিটার পর্যন্ত জল জমা করে রাখতে পারে! দেহে পর্যাপ্ত জল ধারণ করে রাখা যায় বলে এই উদ্ভিদগুলো সাধারণত কম বৃষ্টি হয় এরকম শুষ্ক, উত্তপ্ত স্থানে জন্মাতে পছন্দ করে। বাওবাব পৃথিবীর প্রাচীনতম ‘অ্যাঞ্জিওস্পার্ম’ উদ্ভিদের একটি। বাওবাব গাছ দীর্ঘায়ু হয়ে থাকে, সাধারণ ১ হাজার বছরের মতো বেঁচে থাকে সহজেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া একটি নমুনার বয়স তো ৬ হাজার বছর নির্ণীত হয়েছে।
৫. ডেজার্ট আয়রনউড
বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ডেজার্ট আয়রনউড দেখতে অনেকটা মটর গাছের মতো মনে হয়। এটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ হলেও এর দেহাবয়ব বৃক্ষের মতো। উত্তর আমেরিকার সনোরান মরুভূমিতেই কেবল এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। এটি অত্যন্ত ধীর গতিতে বড় হয় এবং ১০০/২০০ বছরে মাত্র ২৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে আর বৃদ্ধি পায় না। এর নীল এবং ধূসর রঙের পাতাগুলো একে দেখতে আকর্ষণীয় করে তোলে। দীর্ঘায়ু এই উদ্ভিদ সর্বোচ্চ ১,৫০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
৬. সাগুয়ারো ক্যাকটাস
ক্যাকটাস উদ্ভিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হলো সাগুয়ারো ক্যাকটাস। এটি দেখতেও কখনো কখনো বৃক্ষের মতো লাগে। মূল দেহকাণ্ড থেকে অনেকসময় কোনো শাখা-প্রশাখা সৃষ্টিই হয় না। ফলে একে দেখতে একটি বড়সড় খুঁটির মতো মনে হয়। আবার যেগুলোর গায়ে শাখা জন্মায়, সেগুলোও জন্মাতে ৭০-১০০ বছর সময় নেয়। এই উদ্ভিদগুলো সর্বোচ্চ ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। বন্য প্রাণীর আক্রমণ কিংবা জলর অভাবে শুকিয়ে যাওয়া ছাড়া এই উদ্ভিদগুলো মোটামুটি ২০০ বছরের মতো বেঁচে থাকতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct