আপনজন ডেস্ক: দুশো বছর পর ফের আমেরিকায় ফের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ওয়াশিংটন ডিসি-র ক্যাপিটলে। আর সেই তাণ্ডব চালানো হয় মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালীন। ট্রাম্পের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের জের এত তীব্র ছিল যে প্রাণ বাঁচাতে মার্কিন সেনেট সদস্যরা গোপন সুড়ঙ্গ দিযে পালিযে বেঁচেছেন। কিন্তু এই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। একজন নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। অন্য তিনজনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। আহতও হয়েছেনও বেশ কয়েকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াশিংটনে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ জানায়, ৫২ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করার জন্য যখন প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই ট্রাম্প সমর্থকরা মারমুখী হয়ে ওঠে। ব্যাপক ভাঙচুর করে। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে ট্রাম্প সমর্থকরা সেখানে তাণ্ডব শুরু করে।
সংবাদ সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। তবে, মার্কিন কংগ্রেসে সহিংসতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, ‘অনেকেই অস্ত্রসহ এখানে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিতে এসেছে। তারা অস্ত্রের পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্য, ইট এবং বোতলও নিক্ষেপ করেছেন।’ জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে ওয়াশিংটন ডিসির নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কারফিউ দেয়া, জরুরি পণ্য সরবরাহের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
তিনি জানান, আগামী ২১ জানুয়ারি দুপুর ৩টা পর্যন্ত এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে নতুন করে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাপিটল ভবনে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে একপর্যায়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পরে ফের অধিবেশন শুরু হয়।
উল্লেখ্য, মার্কিন কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে হামলা-তাণ্ডব দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন হলেও প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে ১৮১৪ সালে হামলার কবলে পড়েছিলো ক্যাপিটল ভবন। ওই ঘটনার ২০৪ বছর পর বুধবার এমন ঘটনা ঘটল। তবে দুটি ঘটনার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। ১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ব্রিটিশ বাহিনী নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে হামলা করে এবং এতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর ওই যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বাহিনীর হামলার শিকার হয় ক্যাপিটল ভবন।
যুক্তরাষ্ট্রের হিস্টোরিকাল সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৮১২ সালের সেই যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে এই ধরণের আগ্রাসন হল। ওই হামলার সঙ্গে বুধবারের ঘটনার পার্থক্য হল এবার নিজ দেশের নাগরিকদের হামলার শিকার হয়েছে ক্যাপিটল ভবন। এখন সেখানে কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিও নাই।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটি হামলার পর এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউএস ক্যাপিটল শুধু একটি ভবন নয়, এটি মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি। এখানে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর আমাদের সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের মৌলিক স্মারক।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস আইনসভা ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের তাণ্ডবে তিনি ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে সোশ্যাল মিডিয়া ট্যুইটারে মোদিম বলেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গা ও সহিংসতার খবরে আমি ব্যথিত। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর অব্যাহত রাখতে হবে। বেআইনি প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকল হতে দেওয়া যায় না।'
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct