মহম্মদ নাজিম আক্তার, চাঁচল: বিধবা ভাতা জোটেনি, পাননি সরকারি ঘর,মেলেনি সমব্যাথী প্রকল্পের টাকাও! ভোট দিবেনকি? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে চিত্রা দেবী বলেন,দেশের নাগরিক আছি,ভোট দেওয়া আমার গনতান্ত্রিক অধিকার।ভোট দিব,তবে কাকে দিব তা এখনো স্থির করি নি ৷
একাকিত্ব জীবনে গোয়াল ঘরেই বসবাস। গত আমফানে বেড়া ও টিনের ছাউনির ছোট্ট কুটিরটিও নড়বড়ে বসেছে।পেটে ভাত জুটে না! মেরামত করব কি করে? মৃদু যন্ত্রণা নিয়ে এমনটাই জানালেন নিঃসন্তান বিধবা বৃদ্ধা চিত্রা ব্যানার্জী।মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের ভগবানপুর জিপির দক্ষিন কালিগঞ্জ গ্রামের চিত্রা দেবীর অসহায় অবস্থার জানালেন গ্রামবাসীরাই।
পূর্বে ছোট্ট কুটিরে অভাবি দম্পতির সংসার ছিল।লকডাউনে হৃদরোগে স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় একা হয়ে যান বৃদ্ধা।তারপর থেকেই বেঁচে থাকার জন্য গবাদিপশু পালন করতে শুরু করেন চিত্রাদেবী।বর্তমানে উপার্জন গাভী গুলো থেকেই।দুধ বিক্রি করে কোনো ক্রমে জোটে একবেলার আহার।কোনো কোনো দিন রাতের বেলা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন।ঘর নেই,আর ঘর থাকলেও এখন গোয়াল ঘরে পরিণত হয়েছে।শীতকালের হিমেল বাতাস ঢুকে পড়ে ছোট্ট কুটিরে।বেঁচে থাকার জন্য জীবন সংগ্রাম করেই চলেছেন তিনি।চিত্রা ব্যানার্জীর জীবন যন্ত্রনা এতটাই যে তার গবাদি পশু না থাকলে তিনি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতেন,কাঁদতে কাঁদতে এমনটাই জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
স্বামী প্রবীর ব্যানার্জী এলাকায় কোয়াক ডাক্তার ছিল।গ্রামে গ্রামে ঘুরে চিকিৎসা পরিষেবা দিত।
লকডাউনে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে চিকিৎসার অভাবে চাঁচল হাসপাতালেই ইহোলোক ত্যাগ করেন তিনি।গ্রামবাসীরাই চাঁদা তুলে শেষ কৃত্য সম্পন্ন করেন প্রবীর বাবুর। শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান গ্রামবাসী ও স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেবীদের উদ্যোগেই হয়েছিল।নিঃসন্তান চিত্রাদেবী স্বামী হারিয়ে বেঁচে থাকতে চাননি।পড়শি গৃহিনীদের আশ্বাসে আবারও জীবন সংগ্রাম করে চলেছেন ওই বৃদ্ধা।প্রতিবেশীদের পরামর্শে একটি গাভী পালন করতে শুরু করেন চিত্রাদেবী।গাভি দুধ দেয়,তাতেই জুটে আধবেলা দুমুঠো আহার।তার এই অভাবের ছাপ ঘরের কোনে কোনে স্পষ্ট দেখা গেছে।
নিজস্ব শৌচাগার নেই।গোটা গ্রাম গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করলেও তিনি একমাত্র মাটির উনুনে রান্না করেন।
তার অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর আটমাস অতিক্রম হয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত মেলেনি সমব্যাথী প্রকল্পের টাকা।
এছাড়াও বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করা হয়েছে।আবাস যোজনা তালিকায় নাম এসেছে শুনেছেন।
তবে 'দুয়ারে সরকার' কি তা আদৌও জানেননা তিনি,কেউ জানায়ওনি।স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডের জন্য তিনিও আবেদন করবেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।পঞ্চায়েত এলাকায় এরপরের শিবিরে তিনি আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।
দ্রুত যেন চিত্রা ব্যানার্জীকে বিধবা ভাতা ও সমব্যাথী প্রকল্পের টাকা প্রদান করুক সেই দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন। তবে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নাজিমুল হক জানিয়েছেন,সমব্যাথী প্রকল্পের টাকা পঞ্চায়েতে আসলেই তা মিলবে।বিধবা ভাতা আওতাধীনের জন্য দ্রুত চেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং কিভাবে চিত্রাদেবীকে ঘর পাইয়ে দেওয়া যায় সেই দিকেই লক্ষ্য রেখেছি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct