বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিবাদ এখন স্তিমিত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিষয়টির ফয়সালা করা হলেও তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। যদিও ভূমিপুজোর মাধ্যমে রামন্দিরের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। অযোধ্যায় অতীত হয়ে উঠছে বাবরি মসজিদের ইতিহাস। কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও বাবরি মসজিদ-রামমন্দির নিয়ে বিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। তাই রামের ইতিহাস থেকে শুরু করে রামমন্দির, বাবর থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ- সমগ্র বিষয়টি নিয়ে এই অনুসন্ধিৎসু প্রতিবেদনটি লিখেছেন দিলীপ মজুমদার। চতুর্দশ কিস্তি।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ধ্বংস হয় বাবরি মসজিদ। ২৮ বছর পর, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বেরোয় আদালতের রায়। এত দিন যাঁরা দোষী সাব্যস্ত ছিলেন, আদালত তাঁদের বেকসুর খালাস করে দেন। এক বছর আগে রাম জন্মভূমি মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও রামভক্তদের জয়জয়কার। সেসব আমরা পরে আলোচনা করব। যেহেতু আমরা রামমন্দির ও বাবরি রাজনীতির ইতিহাস লিখতে বসেছি নিরপেক্ষভাবে, তাই সালের ক্রম অনুসরণ করতে হবে। নির্ভর করতে হবে বিভিন্ন নথির উপর। ইতিহাস লেখক সেসব নথি এড়িয়ে যেতে পারেন না।
৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বসের বিবরণ আমরা দেব উইকিপিডিয়া ও প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাংবাদিকের প্রতিবেদন ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল থেকে।
ক] ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো ওই বিতর্কিত স্থানে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শোভাযাত্রায় সামিল হয়েছিল দেড় লাখ ভি এইচ পি এবং বিজেপি করসেবক। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আদবানি, মুরলিমনোহর যোশী ও উমা ভারতীর মতো বিজেপি নেতা ভাষণ দিয়েছিলেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন সময়ের প্রথমদিকে জনতা ক্লান্তিহীনভাবে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। সহিংসতা প্রতিরোধে স্থাপনাটির চারদিকে পুলিশ বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল। দুপুরের দিকে এক যুবক বেষ্টনী অতিক্রম করে স্থাপনাটির উপরে চলে যান এবং গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করেন। এই ঘটনা ছিল সহিংসতার আগমনবার্তা। এরপর উন্মত্ত জনতার সামনে পুলিশ বেষ্টনী বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
এরপর উন্মত্ত জনতা কুঠার, হাতুড়ি এবং গাঁইতি দিয়ে ইমারতটি ভাঙা শুরু করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে কাদা ও চুনাপাথরে তৈরি ইমারতটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। [সূত্র : উইকিপিডিয়া]
খ] বিবিসি-র দক্ষিণ এশিয়ার করসপনডেন্স মার্ক টুলি ছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর বিবরণ:
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর আমি একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েছিলাম, যেখান থেকে বাবরি মসজিদ পরিষ্কার দেখা যায়।
ওই দিন বিজেপি ও তার সহযোগীরা মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। তবে সরকার ও আদালতকে তাঁরা জানিয়েছিলেন যে ব্যাপারটা প্রতীকী হবে, কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে। তাঁরা জানিয়েছিলেন, মসজিদের কোন ক্ষতি হবে না।
সেখানে জড়ো হয়েছিলেন দেড় লক্ষ মানুষ। তাঁরা বিজেপি ও ভিএইচপি নেতাদের বক্তৃতা শুনছিলেন। গোলমাল শুরু হল মাথায় হলুদ ফেট্টি বাঁধা স্বেচ্ছাসেবকরা যখন পুলিশ বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেন।
তারপর শুরু হয় টিভি সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ। তাঁদের ক্যামেরা ও টেপ রেকর্ডার ভেঙে ফেলা হয়। এতে উৎসাহিত হয়ে পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে ছুটে যান মসজিদের দিকে। ইঁট ছুঁড়তে শুরু করেন পুলিশের দিকে। মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজের উপর উঠে যান দুই যুবক। তাঁদের দেখাদেখি আরও অনেকে গম্বুজের উপর উঠ পড়েন।
এই ঘটনার প্রতিবেদন বিবিসিকে পাঠাতে হবে। টেলিফোন লাইন অচল। তাই আমি ও হিন্দি পত্রিকার এক সংবাদিক ফৈজাবাদ চলে যাই। সেখানে করসেবকরা আমাদের ভয় দেখান। তারপর আমাদের একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়।
গ] আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সঞ্জয় সিকদারের বিবরণ :
কিছু একটা ঘটতে চলেছে তা স্পষ্ট হবে গিয়েছিল আগের দিন। ৫ ডিসেম্বর ১৯৯২এ লখনউ-এর ঝাণ্ডেওয়ালা ময়দানে। গোটা ময়দানে করসেবক আর রামভক্তরা যেন ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ি। সেই ফোটানোর কাজটা শুরু হয়েছিল বারাণসী থেকে দ্বিতীয় দফার রামরথ যাত্রায়।
দ্বিতীয় দফার রথযাত্রায় কিন্তু শুরু থেকে অনেক বেশি সংগঠিত চেহেরা চোখে পড়েছিল। করসেবক ও রামভক্তদের ধীরে ধীরে তাতিয়ে তোলার কাজটাও চলছিল সুকৌশলে। আদবানি অবশ্য গোড়া থেকে ঋষিসুলভ আচরণ করছিলেন। গোটা পথে ছোট-বড় সভায় এই সুরে এবং মোটামুটি একই বয়ানে বক্তৃতা করেছিলেন তিনি।
রথ যত এগিয়েছে ততই তেতে উঠেছেন করসেবক ও রামভক্তরা। রামভক্তরা আজমগড়ে চিনিকলের শ্রমিকদের মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলেন। শ্রমিকদের পোস্টারে লেখা ছিল : পহলে মিল
খোল, ফির মন্দির বানাও। পরদিন সকালে ওই ঘটনা সম্পর্কে যখন আদবানিকে প্রশ্ন করি, তিনি খানিকটা বিস্ময়ের সুরে বলেন, কই শুনি নি তো।
আসলে আদবানি তাঁর শান্ত ভাবমূর্তি বজায় রেখেছিলেন। রামভক্তদের চাঙ্গা করার কাজ করছিলেন অন্য নেতারা। রামভক্তদের মিছিলের মধ্যে মিশে ছিলেন অনেক সংগঠক। সেই দলে নাকি ছিলেন বাছাইকরা স্বয়ংসেবক আর প্রচারকরা। রামরথ যখন লক্ষ্মৌ পৌঁছল, রামভক্তদের নিনাদে আকাশ-বাতাস কাঁপছে। গোটা লক্ষ্মৌ শহরে অদ্ভুত স্তব্ধতা। মানুষের মনে কি হয় কি হয় ভাব। সর্বত্র এক আলোচনা – ৬ ডিসেম্বর কি হবে !
‘কি হবে’ তা খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৫ তারিখে হিন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি ছবিতে—করসেবকরা অযোধ্যায় গাঁইতি-শাবল জড়ো করছেন।
আর ঝান্ডেওয়ালা ময়দান ? বাংলায় যাকে বলে রাবড়ি পাক ? তলায় আগুন আর হাঁড়ির উপর হাওয়া দেওয়া। অনেক নেতাই তপ্ত বক্তৃতা করলেন। গোটা ময়দান উত্তেজনায় ফেটে পড়ল। আর পাখার বাতাস দিলেন আদবানি। যথারীতি শান্ত ভঙ্গিতে।যা রাবড়ি পাকে একান্ত প্রয়োজনীয়।
৬ ডিসেম্বর সকালে অযোধ্যায় সাজ-সাজ রব। পুলিশে পুলিশে ছয়লাব। প্রশাসন ঘোষণা করল, বাবরি মসজিদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না। যথারীতি মসজিদ ঘিরে রেখেছিল অসংখ্য পুলিশ। হিন্দি বলয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতায় জানা ছিল, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্টেবুলারি (সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী) –এর মধ্যে জাতপাত ও সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ যথেষ্ট। ফলে প্রশাসনের গোপন বরাভয়ে পুলিশের একাংশ লোকদেখানো ভূমিকা পালন করেছিল। অচিরেই হাজার হাজার করসেবক মসজিদে চড়ে বসলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধ্বাস হয়ে গেল ষোড়শ শতকের প্রাচীন মন্দির।
সেদিন দুটি প্রশ্ন মনে জেগেছিল। প্রথমত, এত বড় একটা কাঠামো কয়েক ঘন্টায় মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল, অথচ তেমন কোন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটল না কেন ?
সংগঠিত পরিকল্পনা এবং নিপুণ দক্ষতা ছাড়া এটা কি সম্ভব? দ্বিতীয়ত, সত্যই কি আদবানি কিছু জানতেন না ? না কি তাঁর বিষণ্ণতা ছিল সামগ্রিক পরিকল্পনার অঙ্গ ? উত্তর খুঁজে পাই নি। এখনও পাই নি।
৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে লক্ষ্মৌ ফিরতে শুরু করেছিলেন করসেবকদের অনেকে। বিশেষ করে নারী করসেবকরা। অনেকেই উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। আবার অনেকের চোখমুখ সন্ত্রস্ত। যেন বুঝে উঠতে পারছেন না কাজটা ঠিক হল কি না।...
পরদিন সাত সকালে পৌঁছেছিলাম উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংএর সরকারি বাসভবনে। ততক্ষণে অবশ্য তিনি ‘প্রাক্তন’ হয়ে গিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ সহ চার বিজেপি শাসিত রাজ্যে জারি
হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন। গেরুয়া পাঞ্জাবি ও ধুতি পরিহিত কল্যাণ সিং স্বাগত জানালেন হাসিমুখে। তাঁর নির্দেশে টেবিলে রাখা হল লাড্ডুর থালি। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় হোঁচট খাচ্ছিলেন।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে মাঝে-মধ্যেই একটা চিরকুট বার করে দেখছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল কোন প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন আগে থেকে ঠিক করে লিখে রেখেছেন।
তবে তাঁর একটা কথা আজও আমার মনে আছে—‘গ্যাস ভরতে গ্যয়া ; ওহ তো একদিন ফাটনা থা’। কল্যাণ বলেন নি গ্যাসটা ভরেছিল কারা। [ঢাকা টাইমস, ৩০.০৯.২০২০]
ঘ] ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন :
১৯৯২ সালের জুলাই মাস।
রামমন্দির গড়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ডাক দেওয়া হল। প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন সাধুকে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। তাঁর অনুরোধে সাধুরা রামমন্দির গড়ার কাজ অক্টোবর পর্যন্ত পেছিয়ে দিতে রাজি হলেন।
প্রধানমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়কে নির্দেশ দিলেন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে। উভয় সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতি দিলেন যতক্ষণ আলোচনা শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা শান্তি বজায় রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর কথা রাখতে পারেন নি। তাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা স্বেচ্ছাসেবকদের সমবেত হবার ডাক দিলেন। ফলে ক্ষুণ্ণ হলেন মুসলমান সম্প্রদায়।
ক্রমশ পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংএর সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। আলোচনা প্রসঙ্গে নানা কথা উঠল। যেমন বাবরি মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নেবার কথা, মসজিদকে বিঘ্নিত না করে মন্দির গড়ার কথা, কিংবা করসেবা যেহেতু ধর্নীয় কাজের অঙ্গ তাই এতে অন্য কোন সংকট সৃষ্টি হবে না।
ইতিমধ্যে আবার একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ল। কি না, অবস্থা সামাল দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করবেন। বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বললেন যে বহু মানুষ সমবেত হলেও তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকেও চারদিকে কড়া নজর রাখার জন্য অনুরোধ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে অযোধ্যার চারপাশে ২০ হাজার প্যারা মিলিটারি সৈন্য মোতায়েন থাকল। উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা থেকে বিরত থাকলেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ হিন্দুদের তরফ থেকে কোন গোলমাল যে হতে পারে, এমন কোন গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল না।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। শীতের শান্ত সকাল। বাবরি মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার করসেবক। একটা ঘরের ছাদ থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা। উত্তেজনার পারদ চড়ছে।বাবরি মসজিদের লঘু নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে একদল করসেবক উঠে গেলেন মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজের উপরে। কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন সরকারনিষুক্ত পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস। তিনি রামলালার মূর্তি রক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।
করসেবকরা তখন শাবল, হাতুড়ি, কোদাল নিয়ে মসজিদ ভাঙার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অমিত উৎসাহ তাঁদের। কলের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে দেখছেন প্যারা মিলিটারি সৈন্য। [
THE WALLSTREET JOURNAL 10.12.2012 ]।
মসজিদ ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল দাঙ্গা। দাঙ্গার আগুনে জ্বলল ভারতের ১৬ টি রাজ্য।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
এর আগের পর্বগুলি পড়ুন:
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১৩
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১২
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১১
রাম, রামায়ণ ও বাবরি রাজনীতি/১০
রাম, রামায়ণ ও বাবরি মসজিদ নিয়ে রাজনীতির নেপথ্যে/১
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct