আপনজন ডেস্ক: যে পদ্ধতিতে আরামবাগ টিভির সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন এবং সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে হয়ত দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার আরামবাগ থানার পুলিশের অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে সফিকুল ইসলামের পরিবারের তরফে করা মামলার শুনানিতে সেই অভিযোগ অনেকটাই প্রাসঙ্গিক বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই কারণে, এই গ্রেফতার করার পদ্ধতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের প্রধানকে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। সেক্ষেত্রে অর্নেশ কুমার, ললিতা কুমারী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা লঙ্খন করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও রিপোর্টে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেই, আরামবাগ টিভির সম্পাদক, তাঁর স্ত্রী ও সাংবাদিককে গ্রেফতার করার পেছনে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত তদন্ত করবে।
উলেখ্য, গত ২৯ জুলাই ভোর রাতে বাড়ির দরজা, জানলা ভেঙে গ্রেফতার করা হয়েছিল আরামবাগ টিভির সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন ও আরামবাগ টিভির সাংবাদিক সুরাজ আলি খানকে। এমনকি, সফিকুলের দুই শিশু সন্তানকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আরামবাগ থানায়। সফিকুলের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে পরিস্কার, আরামবাগ থানার আইসি পার্থ সারথি হালদারের নেতৃত্বে বাড়ির দরজা ভেঙে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়, সেই অভিযোগ সেদিন রাত ১২.১০ নাগাদ থানায় দায়ের হয়। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোনও নোটিশ ছাড়ায় গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। তাও আবার বাড়ির দরজা ভেঙে। এই ভাবে কী গ্রেফতার করা যায়? আবার যে ঘটনার ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিন মাস আগে। অথচ, অভিযোগ দায়ের করতে দেরি হওয়ার কোনও কারণ উলেখ ছিল না অভিযোগপত্রে। যিনি অভিযোগ করছেন, তিনি একজন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য। এমনই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অভিযোগের ভিত্তিতে আরামবাগ থানার পুলিশ অতিসক্রিয় ভূমিকা পালন করে গ্রেফতার করছে আরামবাগ টিভির সম্পাদক, তাঁর স্ত্রী ও সাংবাদিককে। এদিন মামলার শুনানি চলাকালিন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টচার্য সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘এই গ্রেফতার সুপ্রিম কোর্টের একাধিক জাজমেন্টকে অমান্য করা হয়েছে। একটি সাংবাদ মাধ্যমের গণতন্ত্রকে হরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। সংবিধানকেও লঙ্খন করা হয়েছে।’ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রোণদীত ভাবেই আরামবাগ টিভির সম্পাদক ও সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ, এই আরামবাগ টিভি সরকার ও পুলিশের একাধিক অনৈতিক কাজ সামনে এনেছে। করোনা অতি মহামারীর সময়, যখন মানুষ খেতে পাচ্ছে না। লকডাউনে গৃহবন্দি, সেই সময় আরামবাগ থানা থেকে ৫৭টি ক্লাবকে এক লক্ষ টাকা করে চেক দেওয়া হয়েছে। সেই খবর স¤প্রচারিত হয়েছিল আরামবাগ টিভিতে। এছাড়াও, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বালির লড়ি আটকে পুলিশের ঘুষ নেওয়ার ছবি দেখিয়ে ছিলেন সফিকুল-সুরাজরা। সেই কারণেই, একটি মিথ্যা মামলায় তাঁদের অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী দিনে আদালতে সেই বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হাইকোর্টের আর এক আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে আরামবাগ টিভির সম্পাদক ও সাংবাদিকদের। যে অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে কোনও ভাবেই আগাম নোটিশ ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না। আমরা আদালতের নজরেও সেই বিষয়টি তুলে ধরেছি। সেইসঙ্গে, যেভাবে একের পর এক কেশ দেওয়া হচ্ছে, সেটাও আদালতের নজরে আনা হয়েছে। আমরা আশাবাদি, দ্রুত পুলিশের এই অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে।’ এই মামলার সঙ্গে ছিলেন সামীম আহমেদ ও পিন্টু কাঁরারের মতো অভিজ্ঞ আইনজীবীরাও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct