আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি তথা বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য ধামাখালিতে নিযুক্ত এক শিখ আইপিএস অফিসারকে ‘খালিস্তানি’ বলে কাটক্ষ করায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়া তিনি তার তীব্র প্রতিক্রিয়অ ব্যক্ত করেছেন। ঘটনাটির সূত্রপাত মঙ্গলবার। শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল-সহ অন্য বিজেপি নেতানেত্রীর সন্দেশখালিতে প্রবেশ করার মুখে পুলিশি বাধায় পড়েন। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল দাবি করেন, ওই পুলিশ অফিসার তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন না। সেসময় দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে বচসা বাধে। অভিযোগ, সেই সময় অগ্নিমিত্র পল জসপ্রীত সিংকে খালিস্তানি বলে মন্তব্য করেন। জসপ্রীত সিং তার পাল্টা বলতে শোনা যায়, ‘আমি পাগড়ি পরেছি বলেই আপনারা আমাকে খালিস্তানি বলছেন? এটাই কি আপনি শিখেছেন? একজন পুলিশ অফিসার যদি পাগড়ি পরে সততার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে, তাহলে সে আপনার কাছে খালিস্তানি হয়ে যায়? আপনাদের লজ্জা হয় না?’ জসপ্রীত সিং আরও বলেন, আমি শুধু আমার কাজ করছি। আমি কি আপনার ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছি, আপনি কেন আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলছেন? এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,আজ বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি নির্লজ্জভাবে সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম করেছে। @BJP4India মতে পাগড়ি পরা প্রত্যেক ব্যক্তিই খালিস্তানি। আমি আমাদের শিখ ভাই ও বোনদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার এই দুঃসাহসী প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি, যারা তাদের ত্যাগ এবং আমাদের জাতির প্রতি অবিচল সংকল্পের জন্য সম্মানিত। মমতা আরও বলেন, আমরা বাংলার সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং তা নষ্ট করার যে কোনও প্রচেষ্টা রুখতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব। বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ সংবিধান অনুযায়ী ওই পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কেউ তাকে গালি দেয়নি বা খালিস্তানি শব্দটি ব্যবহার করেনি। তিনি একটি ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছেন। শিখ ধর্মকে সম্মান করি। মমতা বন্দোপাধ্যায় সংকীর্ণ রাজনীতি করেন। শিখ পুলিশ আধিকারিক নিজের নম্বর বাড়াবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অসত্য তথ্য পরিবেশন করেছেন ৷ এদিকে সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেশখালিতে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিককেখালিস্তানি বলা হয়েছে ৷ আমরা আইনি পদক্ষেপ করব ৷ এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা ৷ এটি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার মতো একটি ঘটনা।
এদিকে, ‘খালিস্তানি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যরা কলকাতার মুরলীধর লেনে বিজেপির রাজ্য সদর দফতর ঘেরাও করার পরিকল্পনা করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। আসানসোলেও ফের বিক্ষোভের ছক কষছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে বিজেপির ডাকা আইন অমান্য আন্দোলনে কলকাতায় হেস্টিংস থানার কাছে একজন বিজেপি নেতার শিখ নিরাপত্তারক্ষীর মাথার পাগড়ি খুলে যায় ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেও রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয় ৷ তবে, ঘটনায় প্রকাশ শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালিতে যেতে বাধা দিয়েছিল পুলিশ। কারণ এই যুক্তিতে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং রাজ্য সরকার সোমবার সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে অশান্ত এলাকা পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে অশান্ত এলাকা পরিদর্শনের অনুমতি দিলে তিনি সন্দেশখালি পৌঁছন। গত ৫ জানুয়ারি রেশন কেলেঙ্কারির ঘটনায় সন্দেশখালিতে শাজাহান খানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যাওয়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকদের উপর হামলা চালায় একদল উন্মত্ত জনতা। এরপর তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখল ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মহিলারা। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি সন্দেশখালি অভিযানে নামে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct