প্রাণ কি শুধুই পৃথিবীতে— এ কৌতূহল নতুন নয়। পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানে বহু দিন ধরেই চলছে নানা গবেষণা। নানা খোঁজ। কোথাও কখনও গ্রহের মাটিতে কোনও রেখা দেখতে পেলেই বিজ্ঞানীদের চোখ চিকচিক করে ওঠে, ওটা কি শুকিয়ে যাওয়া নদীর চিহ্ন। আর যদি তা হয়, তা হলে নিশ্চই সেই গ্রহে জল ছিল কোনও এক দিন। যা প্রাণের উৎস।
যদিও এ গ্রহের বাইরে নানা গবেষণার পরেও এখনও পর্যন্ত প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তবে এ বার ‘বাসযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’— এমন তিনটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে এক গবেষক দল। পৃথিবী থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে এই তিনটি গ্রহ সূর্যের মতো (কিন্তু আকারে অনেকটাই ছোট) একটি তারাকে ঘিরে আবর্তমান। এই গ্রহগুলির আকার এবং তাপমাত্রা অনেকটা পৃথিবী এবং শুক্রর মতোই। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সেই গবেষক দলে রয়েছেন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ বা এমআইটি এবং বেলজিয়ামের লিএজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা একটি বিশেষ টেলিস্কোপের সাহায্যে এই গ্রহগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। (বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এই টেলিস্কোপের নাম ‘টিআরএপিপিআইএসটি’) গবেষকদের মতে, সাধারণ অপটিক্যাল টেলিস্কোপ দিয়ে ওই ছোট মাপের এবং কম তাপমাত্রার খোঁজ পাওয়া প্রায় এক রকম অসম্ভব।
২০১৫-র সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছিল নজরদারি। টেলিস্কোপে চোখ রেখে সূর্যের মতো এই তারাটিকে সব সময় খেয়াল রাখছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন, টিআরএপিপিআইএসটি-১। আকারে বৃহস্পতি গ্রহের মতো। অর্থাৎ সূর্যের আট ভাগের এক ভাগ। তাপমাত্রাও বেশ কম। তাই বিজ্ঞানীরা একে ‘আল্ট্রাকুল’ বলেছেন।
তারাটায় চোখ পড়েছিল তখন। কিন্তু তাকে ঘিরে যে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রহ, সেটা কিন্তু সে সময় নজরে আসেনি বিজ্ঞানীদের। ওঁরা শুধু খেয়াল করেন, তারাটি থেকে নির্গত তাপ তরঙ্গ (ইনফ্রারেড রশ্মি) বার বার কোনও কিছুতে বাধা পাচ্ছে। তখনই বিজ্ঞানীদের মনে হয়, নিশ্চই এমন কোনও বস্তু রয়েছে যাতে ধাক্কা খাচ্ছে সেই তরঙ্গ। কিন্তু কী সেই বস্তু?
গবেষণা চলতে থাকে। চলতে থাকে খোঁজ। অবশেষে বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা, ওই বস্তুগুলি আসলে এক একটি গ্রহ। একদম ভিতরের দিকের দু’টি গ্রহ টিআরএপিপিআইএসটি-১-কে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর হিসেবে সময় নেয় দেড় দিন এবং দু’ দিনের কিছু বেশি। তৃতীয় গ্রহটি ৪ দিন থেকে ৭৩ দিন পর্যন্ত নিতে পারে। টিআরএপিপিআইএসটি-১ থেকে এই গ্রহগুলির দূরত্ব এবং তাপমাত্রা হিসেব করে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এখানে জল ও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
গবেষকদের কথায়, যে দু’টি গ্রহ তারাটির সব চেয়ে কাছে তাদের রয়েছে এমন গোলার্ধ যেখানে সব সময় দিন। এবং অন্য গোলার্ধে সব সময় রাত। সুতরাং যেখানে সব সময় দিন সেখানকার তাপমাত্রা প্রাণ ধারনের ক্ষেত্রে বেশ বেশি। আবার যেখানে সব সময় রাত, সেখানে ঘটনাটি ঠিক উল্টো। তাপমাত্র বেশ কম। তাই প্রাণের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু আশাহত হওয়ার কিছু নেই। দুই গ্রহেরই পশ্চিমে রয়েছে এমন একটি জায়গা যার তাপমাত্রা প্রাণেরবিকাশের জন্য উপযুক্ত। ঠিক যেমন তৃতীয় গ্রহটি। বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহটির তাপমাত্রা পুরোটাই প্রাণের বিকাশের জন্য একেবারে ঠিক।
চাঁদ, মঙ্গল পেরিয়ে এ বার তবে কি নয়া সৌর জগতের জন্য ব্যাগ গোছানো শুরু হবে?