দাঙ্গার সময় অনেকে জাত ধর্ম বা দেখে প্রাণে বাঁচানোটাই প্রধান কর্তব্য মনে করে থাকেন। কারণ তারা তো একসঙ্গে থাকতেন কিংবা পরম বন্ধু। সেরকম এক ঘটনার সাক্ষী থাকল দিল্লির অশোক নগর। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যখন কয়েকজন মুসলিমকে প্রাণে মারতে উদ্যোগী হয় তখন চুপ থাকতে পারেননি প্রেমকান্ত বাঘেল নামে ওই মুসলিম যুবকদের প্রিয় বন্ধু। গেরুয়া বাহিনীর আগুন থেকে ৬ জন মুসলিম বন্ধুকে বাঁচাতে পারলেও আগুনের হাত থেকে রেহাই পাননি প্রেমকান্ত। প্রায় সত্তর শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়ে প্রেমকান্ত এখন জীবন যুদ্ধে লড়ছেন।
জানা গেছে,দাঙ্গা চলাকালীন প্রেমকান্তের বাড়ির পাশে থাকা মুসলিম বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। প্রেমকান্ত যখন দেখলেন তার মুসলিম প্রতিবেশিদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে তিনি এক মুহুর্ত দেরি না করে তাদেরকে সাহায্য করতে চলে যান। জীবন বাজি রেখে প্রতিবেশিদের উদ্ধার করতে থাকেন। আগুন জ্বলতে থাকা ঘরগুলো থেকে বের করে আনেন আটকে পড়া মানুষদের। তবে মুসলিম বন্ধুর বয়স্ক মাকে উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন প্রেমকান্ত। দগ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচিয়েছেন অন্তত ৬ জন মুসলিমের। তবে দগ্ধ হওয়ার পরেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি কেউ। সারারাত একইস্থানে থাকার পর পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা গুরুতর। শরীরের ৭০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে গেছে। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। তবে তার অবস্থা এখনো সঙ্কটাপন্ন। প্রেমকান্ত সর্বশেষ জানিয়েছেন, তিনি তার বন্ধু ও তার প্রতিবেশিদের রক্ষা করতে পেরেছেন ভেবে তৃপ্তি অনুভব করছেন। প্রেমকান্তের মত এমন অনেকেই এগিয়ে এসেছেন দিল্লির দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থদের বাঁচাতে। মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লির শিখ সম্প্রদায়ও। হামলা থেকে নিরাপদ থাকতে যেসব মুসলিম ঘর ছেড়েছিলেন তাদের জন্য নিজেদের একটি প্রার্থনাস্থল গুরদোয়ারার দরজা খুলে দিয়েছেন দিল্লির শিখরা। মুসলিমদের পাশে দাড়িয়েছেন অশোকনগরের বহু হিন্দুও। তারা ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মুসলিম পরিবারকে নিজেদের বাড়িতে সুরক্ষা দিয়ে রেখেছেন। তাদের রক্ষা করে ভারতের সৌভ্রাতৃত্বের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct