বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ভোটে জিতে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু, এনাআরসি ও অন্যান্য ইস্যুতে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। তার আঁচ পাওয়া গেলেও বাস্তবে মোদি সরকারের উপর মানুষের আস্থা কতটা তা বোঝা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার এক সমীক্ষা তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্টে আভাস মিলেছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চাকরি-বাকরির অপ্রাপ্তি, জিনিসপত্রের দাম এবং বেতন নিয়ে রীতিমতো হতাশ আমজনতা। এই পরিস্থিতি গত ছ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে জানা যাচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাংক বা আরবিআই প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টের এমন তথ্যই সামনে এসেছে।
নাগরিকরাই বাজারে পণ্যের প্রধান ক্রেতা (কনজিউমার)। তাই তাদের আস্থার (কনফিডেন্স) পরিমাপ করে নিয়মিতই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরীক্ষা করে আরবিআই। আর তা মাপা হয় 'কারেন্ট সিচুয়েশন ইনডেক্স (সিসিআই)' দিয়ে, দেশটির প্রধান শহরগুলোর নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে। সেই অর্থনৈতিক অবস্থা পরীক্ষা করতে গিয়ে আরবিআই দেখেছে, প্রথম মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই সূচক পৌঁছেছিল ১০৩.১-এ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সূচক ১০০ এর ওপরেই ছিল। কিন্তু সেই বছরের নভেম্বরে নোট বাতিলের ঘোষণার পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কমতে শুরু করে। কারণ, তার পরিণতির জন্য ভুগতে হচ্ছিল সাধারণ মানুষকে। সেই অবস্থাটা চলেছিল আড়াই বছর। ৩০ মাস পর চলতি বছর লোকসভা ভোটের আগে মার্চে সেই সূচক বেড়ে পৌঁছায় ১০৪.৬-এ। কিন্তু মে মাস থেকেই তা নামতে শুরু করে। গত মে মাসে সেই সূচক ছিল ৯৭.৩। জুলাইয়ে তা আরও কমে হয় ৯৫.৭। যা সেপ্টেম্বরে আরও নেমে ঠেকেছে ৮৯.৪-এ। কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্সের (সিসিআই) আরও একটি দিক রয়েছে। তার নাম 'ফিউচার এক্সপেকটেশন্স ইনডেক্স' (এফইআই)। দেখা যাচ্ছে, আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, সেই আশাও কমতে শুরু করেছে মানুষের মধ্যে। ওই সূচক চলতি বছরের জুলাইয়ে ছিল ১২৪.৮। যা সেপ্টেম্বরে নেমে পৌঁছেছে ১১৮-এ।
এর আগে দ্বিতীয় মেয়াদে মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সেপ্টেম্বরে ব্যাপকহারে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে দেশ। যদিও তা সরাসরি স্বীকার করেননি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমন। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি নাকচ করে বলেছিলেন, 'সারাবিশ্বেই মন্দা চলছে। ভারতীয় অর্থনীতি তথা প্রবৃদ্ধির হারে তারই প্রভাব।' তবে সেই মন্দার খবরকে শুরু থেকেই অনুমোদন দিয়েছে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক।
যদিও সে সময় অর্থনৈতিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, 'বিজেপি সরকারের সার্বিক চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনাই মন্দার কারণ। সরকারি হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশটির প্রবৃদ্ধির হার গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।'
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct